শনিবার, ৯ মে, ২০২০

Counter Post: নেম ও ইন্দ্র – প্রকৃত রহস্য উন্মোচন সমীক্ষা





জানতে পারলাম যে দয়ানন্দীরা নাকি আমার ব্লগের বৈদিক ঋষির সাকার ঈশ্বর দর্শন —এই পোস্টের এক অংশের বিরুদ্ধে পোস্ট লিখছে ৷ সেই পোস্টি সমীক্ষাসহ নিচে দেওয়া হলো-
"নেম ও ইন্দ্র– প্রকৃত রহস্য উন্মোচন"
ঋগ্বেদের ৮ম মণ্ডলের ১০০তম সূক্তের ঋষি হচ্ছেন ভার্গব নেম। এই সূক্তের ৩য় ও ৪র্থ মন্ত্রকে মাঝ থেকে তুলে দিয়ে অনেকে অপপ্রচার চালায় যে, নেম ঋষি নাকি ঈশ্বরের অস্তিত্বের উপর প্রশ্ন তোলায় ইন্দ্র অর্থাৎ পরমেশ্বর সাকার রূপ ধরে ঋষির সামনে এসে হাজির হয়ে নিজের অস্তিত্বের  প্রমাণ দিয়েছেন।
এই বিষয়ে অপপ্রচারকারীদের প্রদত্ত মন্ত্রের উদ্ধৃতি দেখে নেওয়া যাক–
"নেম ঋষি বলেন, ইন্দ্র নামে কেউ নেই। কে তাঁকে দেখেছে? আমরা কাকে স্তুতি করব?
(ঋগ্বেদ ৮/১০০/৩)
পরম ঐশ্বর্যবান ভগবান ইন্দ্র তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে বলেছেন, হে স্তোতা আমি তােমার নিকটে এসেছি, আমায় দর্শন কর সমস্ত ভুবন কে আমরা মহিমা দ্বারা অভিভুত করি যজ্ঞের প্রদেগন আমাকে বর্ধিত করে, আমি বিদারনশীল ভূমি বিদীর্ণ করি।
(ঋগ্বেদ ৮/১০০/৪)"

শঙ্কার সমাধান– উপর্যুক্ত মন্ত্র দুইটির বিষয়ে শঙ্কা সমাধান করার জন্য কয়েকটি বিষয়ে সকলের দৃষ্টি আকর্ষণ করছি।
১. অপপ্রচারকারীরা এই মন্ত্রদ্বয়ের অনুবাদ গ্রহণ করেছে রমেশচন্দ্রের অনুবাদিত ঋগ্বেদ থেকে, যার প্রকাশক হলো হরফ প্রকাশনী। যারা এই মন্ত্রে ঈশ্বরের সাকারত্ব প্রমাণ করার জন্য এই হরফের বেদ থেকে প্রমাণ দেয়, তারাই আবার মুসলিমদের সাথে বিতর্ক করার সময় হরফ প্রকাশনীর বেদ অনুবাদ মানে না, অস্বীকার করে। সেই অস্বীকারকৃত বেদ অনুবাদ থেকেই নিজেদের প্রমাণ প্রদর্শনের মতো হিপোক্রেসি আর কি বা হতে পারে!

সমীক্ষাঃ পাঠক, প্রথমে আলোচ্য বিষয়ে আমাদের মূল পোস্টটি দেখে আসুন ৷ পোস্টের লিঙ্ক ( http://vaishnavaism.blogspot.com/2018/03/beholding-God-by-vedic-seers.html?m=1 ) ৷মূল পোস্টে দেখতে পাবেন যে, আমরা কেবল রমেশচন্দ্র দত্তের অনুবাদই দিইনি, সাথে শ্রীপাদ দমোদার সতবলেকর কৃত সুবোধ ভাষ্যেরও স্ক্রীণশর্ট দিয়েছি ৷ যেহেতু আমরা কেবল রমেশচন্দ্রের অনুবাদ নিয়ে পরে নাই, সেহেতু ১ নং আপত্তিটি অতি তুচ্ছ ৷

২. তাদের দেওয়া অনুবাদ অনুসারে যদি ঈশ্বরকে কেউ দেখেন নাই জন্য নেম ঋষি ঈশ্বরের অস্তিত্বে প্রশ্ন তোলে, তাহলে বলতে হয় নেম ঋষি বর্তমান দিনের নাস্তিকদের মতো! কিন্তু তা কখনই সম্ভব নয়। কারণ ব্রহ্মজ্ঞানী ঋষিরাই যেখানে উপনিষদে বলে গেছেন ঈশ্বরকে চোখে দেখা যায় না, তখন সেই ঋষিই কিভাবে ঈশ্বরকে চোখে না দেখার জন্য ঈশ্বরের উপরে প্রশ্ন তুলতে পারেন? এটি অসামঞ্জস্যপূর্ণ নয় কি?

সমীক্ষাঃ ঋষি কি জন্ম থেকেই ঋষি হয়ে জন্মায়? নাকি সাধনা দ্বারা ঋষি হয়ে উঠতে হয়? ঋষিত্ব লাভ করার পূর্বে যদি কেউ ঈশ্বরের অস্তিত্ব সম্পর্কে প্রশ্ন তুলে সেটা অপরাধ কিসের? আর ব্রহ্মজ্ঞানী ঋষিরা কি বলে গেছেন যে ঈশ্বরকে চোখে দেখা যায় না? দেখুন উপনিষদে আছে- 

যত্তে রূপং কল্যাণতম তত্তে পশ্যামি ৷” (ঈশোপনিষদ, ১৬)
— যাহা তোমার কল্যাণতম রূপ তাহা আমি দেখি ৷

অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রতিপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যং।
 — “তোমাকে অজাত জেনে কেহ তোমার কাছে আসে আর তার চিত্ত ভয়ব্যাকুল হয় ৷ হে রুদ্র, হে ভীষণ, তোমার সেই যে অন্য হাস্যময় প্রসন্ন মুখমন্ডল, তার মধুর হাসি দিয়ে তুমি আমায় রক্ষা কর সর্বদা ৷” (শ্বেতাশ্বতর ৪/২১)

“সূর্যের অভ্যন্তরে যে পুরুষ দৃষ্ট হন তিনি হিরণ্যবর্ণ, তাহাঁর হিরণ্যশ্মশ্রু, হিরণ্যকেশ— নখাগ্র হতে সকল অঙ্গই সুবর্ণময় ৷” (ছান্দোগ্য ১/৬/৬-৭)

যদা পশ্যঃ পশ্যতে রূক্মবর্ণ কর্তারমীশং...’ (মুণ্ডুক ৩৷১৷৩)
— যখন দ্রষ্টা রূক্মবর্ণ জগতকর্তা পরমেশ্বরকে দেখেন... 

তদ্ধৈষাং বিজজ্ঞৌ তেভ্যো হ প্রাদুর্বভূব তন্ন ব্যজানত কিমিদং যক্ষমিতি ৷৷
                     //কেন উপনিষদ ৩/২।
সরলার্থ —ব্রহ্ম দেবতাদের মিথ্যা অভিমান জানিতে পারিয়া তাঁহাদের মঙ্গলার্থ তাঁহাদের সমীপে আবির্ভূত হইলেন। কিন্তু দেবগণ এই আবির্ভূত রূপ দেখিতে পাইয়াও ঐ পূজনীয় মূর্তিটি কে তাহা চিনিতে পারিলেন না।

সুতরাং উপনিষদ প্রমাণে ঈশ্বর সাকার এবং তিনি দর্শনযোগ্য ৷ তবে আমাদের চর্মচক্ষুর সামর্থ্য নেই তাঁকে দর্শন করার, কিন্তু ভগবান যাকে কৃপা করে দর্শন দিতে চান, তিনি তার চক্ষুকে ভগবানের রূপ দর্শন করার সামর্থ্য দিয়েই আবির্ভূত হন ৷

শ্রীভগবান গীতায় (১১/৮-৯) বলেছেন—
“হে অর্জুন, তুমি তোমার এই চর্মচক্ষুদ্বারা আমার এই রূপ দর্শনে সমর্থ হইবে না । এজন্য তোমাকে দিব্যচক্ষু দিতেছি, তদ্দারা আমার এই ঐশ্বরিক যোগসামর্থ্য দেখ । 
সঞ্জয় কহিলেন - হে রাজন্‌ মহাযোগেশ্বর হরি এইরূপ বলিয়া তৎপর পার্থকে পরম ঐশ্বরিক রূপ দেখাইলেন ।”
আর ভগবান যখন অবতাররুপে আসেন, তখন সর্বসাধারণের দর্শনযোগ্য শরীর গ্রহণ করেই আবির্ভূত হন ৷

কেন উপনিষদে দেখা যাচ্ছে যে, দেবতাদের মিথ্যা অহংকার দূর করতে ব্রহ্ম তাদের সম্মুখে আবির্ভূত হয়েছিল, তদ্রুপ ইন্দ্র নেম ঋষির সন্দেহ দূর করবার জন্য তার সামনে আবির্ভূত হয়েছিল -- এ সত্যকে নিরাকারবাদীরা সহজে স্বীকার করতে পারেনা, এর চেয়ে বড় প্রহসন আর কি হতে পারে???



৩. অপপ্রচারকারীদের সাথে মুসলিমদের হুবহু মিল দেখতে পাওয়া যাচ্ছে। কারণ তারা সম্পূর্ণ সূক্ত বা সূক্তের শুরু থেকে মন্ত্র তুলে না দিয়ে মাঝ থেকে দুই একটা মন্ত্র তুলে দিয়ে নিজেদের মান্যতা প্রতিষ্ঠা করতে চায়। এখানেও তেমন ঘটেছে। অপপ্রচারকারীরা এই মন্ত্রগুলোকে ঋষিবাক্য মানে। যদি এই সূক্তটা নেম ঋষিরই বাক্য হয়, তবে এই সূক্তের ১-২ মন্ত্র দেখলে স্পষ্ট দেখতে পারবেন সেখানে ইন্দ্রকে স্পষ্টভাবে স্তুতি করা হচ্ছে এবং ইন্দ্রকে নিজের সখা বলা হয়েছে! অর্থাৎ ৩য় মন্ত্রে যদি নেম ঋষি ঈশ্বরকে না দেখতে পাওয়ার জন্য অস্বীকার করতো, তবে ১ম ও ২য় মন্ত্রে তাঁকে এভাবে স্তুতি করা হতো না। অর্থাৎ অপপ্রচারকারীরা এখানে মুসলিমদের মতো আংশিক তথ্য প্রচার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করছে৷

সমীক্ষাঃ কত বড় মিথ্যাবাদীর দল দেখুন! আমরা নাকি কেবল মাঝ খান থেকে দু-একটা শ্লোক দিয়েছি ৷ কিন্তু আমাদের ব্লগের মূল পোস্টটিতে দেখতে পাবেন যে, সেখানে স্পষ্টত সূক্তটির প্রথম থেকে ৫নং মন্ত্র পর্যন্ত অনুবাদযুক্ত স্ক্রীণশর্ট দিয়েছি আমরা ৷
সূক্তটিতে নেম ঋষি প্রথম দুটি মন্ত্রে ইন্দ্রের স্তুতি করে, পরের দুটি মন্ত্রে উল্লেখ করেছেন যে, প্রথমে তিনি ইন্দ্রদেবের অস্তিত্ব নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন, তার সন্দেহ নিবারণের জন্যই ইন্দ্রদেব তাকে দর্শন দেন ৷ বেদে এই ঘটনার উল্লেখ দ্বারা দেবতাদের অস্তিত্বের সত্যতার প্রমাণ স্থাপন করা হয়েছে যাতে পরবর্তীতে কেউ নেম ঋষির মতো সন্দিহান না হয় ৷ আগে স্তুতি করে, পরে তাদের মধ্যকার ঘটে যাওয়া ঘটনার উল্লেখ করা হয়েছে মাত্র ৷

৪. অপপ্রচারকারীদের মতে, এই ৪র্থ মন্ত্রে ইন্দ্রের সাথে নেম ঋষির প্রত্যক্ষ কথোপকথন রয়েছে৷ অর্থাৎ তাদের মান্যতা মেনে নিলে বেদে ঋষির ইতিহাস আছে, এরূপ মানতে হয়। আর বেদে ইতিহাস থাকলে বেদ অনিত্য হয়ে যায়৷ অর্থাৎ তাদের এই দাবী সত্য হিসেবে মেনে নিলে এটি মানতে হবে যে, নেম ঋষির ইন্দ্রের সাথে পূর্বে ঋগ্বেদের ৮।১০০ সূক্তটির অস্তিত্ব ছিলো না। ফলে বেদের উপর অনিত্যতার দোষ আরোপিত হয়। কিন্তু আমাদের সনাতন শাস্ত্র বেদকে বলছে নিত্য এবং বেদে কোনো ব্যক্তি বিশেষের ইতিহাস নাই। যেমন–
i. অতএব চ নিত্যত্বম্।। [বেদান্ত দর্শন– ১।৩।২৯]
অর্থাৎ এই কারণেই পরমাত্মা থেকে উৎপন্ন বেদ নিত্য।
ii. উক্তন্তু শব্দপূর্বত্বম্।। [মীমাংসা দর্শন– ১।১।২৯]
  • অর্থাৎ বেদরূপ শব্দ যে নিত্য তা আমরা পূর্বে বলে এসেছি। 

সমীক্ষাঃ বেদে অবশ্যই ইতিহাস আছে, বস্তুত বেদ হচ্ছে হিন্দুজাতির ইতিহাস ৷ আর ইতিহাস থাকলেই যে বেদকে নিত্য হবে না তা নয়, কারণ বেদ অর্থ জ্ঞান, বেদপুস্তকে যে জ্ঞান নিহিত আছে তা নিত্য, এইজন্য বেদকে নিত্য বলা যায় ৷ বেদে ইতিহাস আছে, সেই ইতিহাস থেকে আমাদের শিক্ষা নিতে হবে, জ্ঞান আহোরণ করতে হবে ৷ ঋষিরা তাদের সাধনালব্ধ জ্ঞানকে বিভিন্ন ইতিহাস ও প্রেক্ষাপটের সাথে উল্লেখ করেছেন ৷ যেমন- আলোচ্য নেম ঋষি ও ইন্দ্রদেবের প্রসঙ্গই ধরা যায়, নেম ঋষির ইন্দ্র দর্শন লাভের ঘটনা থেকে আমরা এই জ্ঞান লাভ করি যে, ঈশ্বর সত্য এবং তাঁর দর্শন লাভ করা সম্ভব ৷ 

আর আপনারা যে বেদান্তদর্শনের উল্লেখ করেছেন, সেই বেদান্তদর্শনেই দেবতাদের সাকারত্ব স্বীকার করা হয়েছে ৷
বেদান্ত-দর্শন—
“বিরোধঃ কর্ম্মণীতি চেন্নানেকপ্রতিপত্তের্দ্দর্শনাৎ”৷৷ ১/৩/২৭
(কর্ম্মণি) যজ্ঞাদি কার্য্যে (বিরোধঃ) এক সময়ে এক শরীরধারী দেবতার বহু স্থানে উপস্থিত থাকা-রূপ বিরোধ, অসম্ভবনা উপস্থিত হয় (ইতি চেৎ) এইরুপ যদি বলো? উত্তর:— (ন) না, তাহা বলিতে পারো না, অর্থাৎ দেবতাদের শরীর আছে, একথা বলিলেও কোন বিরোধ হয় না, যেহেতু (অনেকপ্রতিপত্তেঃ) একই দেবতা একই সময়ে অনেক শরীর ধারণ করিতে পারেন, (দর্শনাৎ) একথা শ্রুতি, স্মৃতি, পুরাণ ইতিহাস সর্ব্বত্রই দেখা যায় ৷
অর্থাৎ—দেবতাগণের একই সময়ে অনেক দেহ ধারণের ক্ষমতা আছে ৷ এজন্য একই সময়ে বিভিন্ন যজ্ঞে উপস্থিত হওয়াতে বিরোধ হয়না ৷
যখন সামান্য যোগসিদ্ধ পুরুষগণই এককালে বহু শরীরধারণ করতে পারেন (যোগদর্শন ৪৷৪-৫ দেখুন), তখন তাহাদের উপরবর্তী দেবতাদের আর কথা কি? এবার ভাবুন তো, যখন সিদ্ধ যোগী ও দেবতাগণ একই সময়ে বহু শরীরধারণ করে ভিন্ন ভিন্ন স্থানে থাকতে পারেন, তখন সর্ব্বশক্তিমান পরমেশ্বর সাকার হইয়াও সর্বত্র বিরাজমান হওয়া অসম্ভব কি?

সুতরাং দেবতাদের সাকারত্ব স্বীকার করেই বেদান্তদর্শনে বেদকে নিত্য মেনেছে, এতে কোন বিরোধ নাই ৷

৫. বেদ যেহেতু নিত্য, তাই বেদে কোনো মানুষের নাম বা ইতিহাস থাকতে পারে না৷ কিন্তু "নেম" পদটি থাকায় এই পদটিকে নেম ঋষির সাথে গুলিয়ে ফেলে অপপ্রচারকারী দাবী করে যে এই মন্ত্রে নেম ঋষির ইতিহাস বর্ণনা করা হয়েছে। কিন্তু বেদে যে নাম গুলো আছে সেগুলো কোনো ব্যক্তি বিশেষের নাম বা ইতিহাস নয়। এই বিষয়টি মীমাংসা দর্শনে [১।১।৩০–৩১] মহর্ষি পরিষ্কার করে দিয়েছেন।
আখ্যা প্রবচনাৎ।।৩০।।
পদার্থ– (আখ্যা) বেদে মধুচ্ছন্দাদি ঋষির নাম (প্রবচনাৎ) অধ্যয়ন অধ্যাপনার কারণে এসেছে।
অর্থাৎ বেদমন্ত্রের শুরুতে যেসব ঋষির নাম দেখা যায়, তাঁরা মূলত মন্ত্রের স্রষ্টা নন, বরং তাঁরা অধ্যয়ন ও অধ্যাপনা করে এসব মন্ত্র দর্শন করেছেন এবং প্রচার করেছেন। ফলে তাঁদের নাম মন্ত্রের পূর্বে দেখা যায়।
পরন্তু শ্রুতিসামান্যমাত্রম্।।৩১।।
পদার্থ– (তু) বেদমন্ত্রে যেসব তুগ্র, ভুজ্যু, বশিষ্ঠ, কশ্যপ ইত্যাদি নাম পাওয়া যায়, সেগুলো (পরং) কেবল (শ্রুতিসামান্যমাত্রম্) শব্দ সামান্যমাত্র, কারও নাম নয়।
অর্থাৎ বেদ মন্ত্রের অভ্যন্তরে যেসব নাম দেখতে পাওয়া যায়, প্রকৃত পক্ষে সেগুলো কোনো ব্যক্তিবিশেষের নাম নয়, সেগুলো শব্দমাত্র। যেমন– তুগ্র শব্দটি হিংসা অর্থে বর্তমান 'তুজি' ধাতুর সাথে 'রক্' প্রত্যয় যুক্ত হয়ে গঠিত। যার অর্থ হিংসক, বলবান বা গ্রহণকারী।

সমীক্ষাঃ দেখুন, আপনারাই লিখেছেন “বেদমন্ত্রের শুরুতে যেসব ঋষির নাম দেখা যায়,...” অর্থাৎ কেন বেদমন্ত্রের শুরুতে ব্যক্তিবিশেষেরই নাম থাকে, কিন্তু ঐ একই নাম সেই মন্ত্রমধ্যে থাকলে তখন পাল্টি খেয়ে ব্যক্তি থেকে ব্যক্তিহীন হয়ে যাবে কোন যুক্তিতে?? ঋগ্বেদ ৮/১০০ সূক্তের শিরোনামেই নেম ঋষির নাম, এর ৩নং মন্ত্রেও সেই নেম ঋষিরই নাম, আলাদা কোন নাম নয় ৷ আলাদা কোন নাম হলে তখন কেবল শব্দ হিসেবে বিবেচনা করার সুযোগ থাকত ৷


৬. তাহলে এখন প্রশ্ন হতে পারে ৩য় মন্ত্রে "নেম" অর্থ কী? এর সমাধানের জন্য আমাদের নিরুক্ত অনুসরণ করতে হবে৷ নিরুক্তের ৩।২০ এ বলা হয়েছে "নেম ইত্যর্ধস্য"। অর্থাৎ নেম হচ্ছে অর্ধেকের নাম। তাই নিরুক্তগত অর্থ অনুসারে এই ৩য় মন্ত্রে "নেম" কোনো ঋষি বিশেষের নাম নয়, বরং "নেম" অর্থ "অর্ধেক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি"।

সমীক্ষাঃ “নেম” অর্থ "অর্ধেক জ্ঞানসম্পন্ন ব্যক্তি” ৷ তাহলে ইন্দ্রদেবের দর্শন তো কোন না কোন ব্যক্তিরই হচ্ছে !!
আর যাস্কমুনি তার নিরুক্তের প্রত্যেক ব্যাখ্যা কোন না কোন নির্দিষ্ট মন্ত্রের ওপর ভিত্তি করে দিয়েছেন ৷ তিনি উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা মৈত্রায়নী সংহিতার (১৷১১৷৯) একটি মন্ত্রের ভিত্তিতে দিয়েছেন, মন্ত্রটি তিনি উল্লেখ করেছেন - “নেমে দেব নেমেহ’সুরাঃ ৷”
সুতরাং নেম অর্থ অর্ধ— এই ব্যাখ্যা ঋগ্বেদের ৮/১০০/৩ নং মন্ত্রের জন্য প্রযোজ্য নয় ৷

এছাড়া নিরুক্তেও যাস্ক দেবতাদের সাকারত্ব স্বীকার করেছেন ৷ চন্দ্র-সূর্য-অগ্নি প্রভৃতি যেসকল জড়বস্তু আমরা আমাদের স্থূল চক্ষুর দ্বারা দেখতে পাই, নিরুক্তে তাকে ‘অপুরুষবিধ’ দেবতা বলা হয়েছে এবং ঐসকল নামে উহার অধিষ্ঠাত্রী শরীরধারী চেতন দেবতাও আছে যাকে ‘পুরুষবিধ’ দেবতা বলে সংজ্ঞায়িত করা হয়েছে ৷ (নিরুক্ত ৭/৬-৭ অংশ দেখুন) ৷

৭. এখন প্রশ্ন হতে পারে, যদি ইন্দ্র নেম ঋষির সামনে না এসে থাকেন, তবে ৪র্থ মন্ত্রে কেন পরমেশ্বর বললেন, "আমি তোমার সামনে রয়েছি, তুমি দেখো"। এর উত্তর হচ্ছে, ৬ নং পয়েন্ট থেকে আমরা জানলাম নেম অর্থ অর্ধ জ্ঞানী ব্যক্তি। আর যজুর্বেদ বলছে তিনি সর্বব্যাপক [যজু ৪০।১]। তিনি জ্ঞানীর অতিনিকটে কিন্তু অজ্ঞানীর থেকে তিনি অতিদূরে [যজু ৪০।৫]। জ্ঞানীগণ সর্বত্র ঈশ্বরকে দর্শন (অনুভব) করেন। [যজু ৪০।৬]
অর্থাৎ সর্বব্যাপক ও নিরাকার হওয়ায় ঈশ্বরকে কেউ দর্শন করতে পারে না। অর্ধজ্ঞানী ব্যক্তি ঈশ্বরকে দেখতে না পেয়ে ভাবে ঈশ্বর নেই। কিন্তু যখন সেই অজ্ঞানীর সামনে জ্ঞানের প্রকাশ ঘটে তখন তিনি ঈশ্বরকে সর্বভূতে দর্শন করেন, উপলব্ধি করেন।

 সমীক্ষাঃ ৬ নং পয়েন্ট খণ্ডিত হয়েছে ৷ তার পরেও প্রশ্ন করি যে, নেম যদি অর্ধজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তিই হয়, তবে সেই অর্ধজ্ঞান সম্পন্ন ব্যক্তি ৩ নং মন্ত্রে ইন্দ্রের অস্তিত্ব সম্বন্ধে সন্দেহ করার পর হঠাৎ এত জ্ঞান সে কোথায় পেল যে ৪ নং মন্ত্রেই সে সর্বত্র ঈশ্বর দর্শন করতে লাগল???
৪নং মন্ত্রে ইন্দ্র বলছেন "আমি তোমার সামনে রয়েছি, তুমি দেখো"। কিন্তু আপনারা বলছেন, “ওহে বাপু! তুমি যতই সামনে এসে বসে থাকোনা কেন, আমি চোখ খুলব না, তেমায় দেখব না, শুধু অনুভব করব ৷ তুমি নিরাকার, তুমি বিদেয় হও!!” হাহাহা


৮. এবার ধারাবাহিক ভাবে ঋগ্বেদের ৮।১০০।১–৪ মন্ত্রের শুদ্ধ অনুবাদ পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কারের ঋগ্বেদ ভাষ্য থেকে অনুবাদ করে দেওয়া হলো।
অয়ং ত এমি তন্বা পুরস্তাদ্বিশ্বে দেবা অভি মা যন্তি পশ্চাৎ।
যদা মহ্যং দীধ্রো ভাগমিন্দ্রাদিন্ময়া কৃণ্বো বীর্যাণি॥১॥
পদার্থ– জীব প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছে যে, (অয়ম) এই আমি (তন্বা) এই শরীরের সাথে (তে পুরস্তাৎ) আপনার সামনে (এমি) উপস্থিত হয়েছি। (বিশ্বে দেবাঃ) সকল দেব (মা) আমার (পশ্চাদ্ অভিয়ন্তি) পিছে আসে। অর্থাৎ সব দিব্যগুণ আমায় প্রাপ্ত হয়। প্রভুর সামনে উপস্থিত হওয়ার কারণে সব দিব্যগুণ আমাদের মধ্যে প্রবেশ করে৷ হে (ইন্দ্র) পরম ঐশ্বর্যবান প্রভু ! (যদা) যখন (মহ্যম্) আমার জন্য (ভাগং দীধরঃ) ভাগকে ধারণ করেন। আমায় যখন আপনার ভজনীয় গুণ প্রাপ্তি হয় (আৎ ইৎ) তখন শীঘ্রই (ময়া) আমার দ্বারা আপনি (বীর্যাণি কৃণবঃ) শক্তিশালী কার্য করেন৷ অর্থাৎ আমি আপনার মাধ্যম হয়ে যাই এবং আপনার শক্তি দ্বারা আমার কার্য হওয়া শুরু হয়।।১।।

সমীক্ষাঃ জীব প্রভুর কাছে প্রার্থনা করছে যে, (অয়ম) এই আমি (তন্বা) এই শরীরের সাথে (তে পুরস্তাৎ) আপনার সামনে (এমি) উপস্থিত হয়েছি।...... এখানে প্রশ্ন এই যে, প্রভু নিরাকার হলে স্বশরীরে তার সামনে কিভাবে উপস্থিত হয়?? তিনি সাকার না হলে তার সামনে উপস্থিত হওয়া সম্ভব নয় ৷

দধামি তে মধুনো ভক্ষমগ্রে হিতস্তে ভাগঃ সুতো অস্তু সোমঃ।
অসশ্চ্ ত্বং দক্ষিণতঃ সখা মেঽধা বৃত্রাণি জঙ্ঘনাব্ ভূরি॥২॥
পদার্থ– হে প্রভু ! (তে) আপনার (মধুনঃ) এই জীবনকে মধুর বানানো সোম (ভক্ষম্) ভোজনকে, শরীরের অভ্যন্তরে ধারণ করে (অগ্রে দধামি) সবার প্রথমে স্থাপিত করছি। আমি সোম রক্ষণকে নিজের মূল কর্তব্য বানাচ্ছি। (সুতঃ সোমঃ) শরীরে উৎপন্ন সোম (তে) আপনাকে প্রাপ্তির জন্য (হিতঃ ভাগঃ অস্তু) শরীরে ভজনীয় বস্তু সৃষ্টি হোক। সোম রক্ষণ দ্বারা আপনাকে প্রাপ্তকারী হবো। (চ) এবং হে প্রভু ! এই সোম রক্ষণ হওয়ার পর (ত্বম্) আপনি (মে) আমার (দক্ষিণতঃ সখা) ডান হাতের ন্যায় পূর্ণ বিশ্বসনীয় মিত্র (অসঃ) হয়ে থাকো। আপনাকে মিত্ররূপে পেয়ে (অধা) এখন (বৃত্রাণি) বৃত্ররূপ বাসনাকে (ভূরি জঙ্ঘনাব) উত্তমভাবে বিনষ্ট করবো।।২।।

প্র সু স্তোমং ভরৎ বাজয়ন্ত্ ইন্দ্রায়্ সত্যং যদি সত্যমস্তি।
নেন্দ্রো অস্তীতি নেম্ উ ত্ব আহ্ ক ঈং দদর্শ্ কম্ভি ষ্টবাম্॥৩॥
পদার্থ– (বাজয়ন্তঃ) শক্তিকে কামনা করতে থেকে তুমি (ইন্দ্রায়) সেই পরমৈশ্বর্যবান প্রভুর জন্য (স্তোয়ম্) স্তুতিকে (প্র সু ভরত) প্রকর্ষেণ সম্পাদিত করো। (সত্যং অস্তি) যদি প্রভু সত্য হয়, তবে তাঁর জন্য (সত্যম্) সত্যই স্তোমকে সম্পাদিত করো। (নেমঃ উ ত্বঃ) অর্ধজ্ঞান সম্পন্ন কোনো ব্যক্তি (ইতি আহ) এটি বলে যে (ইন্দ্রঃ ন অস্তি) পরমৈর্যবান প্রভু নেই। (কঃ ঈং দদর্শ) কে প্রভুকে দেখেছে ? (কং অভিষ্টবাম্) কার স্তবন করবো আমরা ? অর্থাৎ অপরিপক্ব জ্ঞানে এরকম প্রশ্ন ওঠে। ধীরে ধীরে তপস্যা রূপ অগ্নিতে জ্ঞান পরিপক্ব হয়ে জ্ঞান বৃদ্ধি হলে এই সংসারের প্রত্যেক্ষ বস্তুতে প্রভুর সত্তার অনুভব হয়।।৩।।

সমীক্ষাঃ (কঃ ঈং দদর্শ) কে প্রভুকে দেখেছে
দেখুন, এখানে স্পষ্টত দেখার কথাই চলছে, অনুভবের নয় ৷

অয়মস্মি জরিতঃ পশ্য্ মেহ্ বিশ্বা জাতান্যভ্যস্মি মহ্না । ঋতস্য্ মা প্রদিশো বর্ধয়ন্ত্যাদর্দিরো ভুব্না দর্দরীমি ॥৪॥
পদার্থ– প্রভুর সত্তা বিষয়ে সন্দিগ্ধ স্তোতাকে প্রভু বলেন, হে (জরিতঃ) স্তোতা ! (অয়ং অস্মি) আমি তোমার সামনেই রয়েছি। (মা) আমায় (পশ্য) দেখো। এই জগতের প্রত্যেক পদার্থে আমার সত্তা দেখতে পারবে। (বিশ্বা জাতানি) সব উৎপন্ন পদার্থকে (মহ্না) নিজের মহিমা দ্বারা (অভ্যস্মি) অভিভূতকারী। (ঋতস্য প্রদিশঃ) সত্যের উপদেষ্টা ব্যক্তিগণ (মা বর্ধয়ন্তি) আমার বর্ধন করে। অর্থাৎ সত্যজ্ঞান প্রাপ্তকারী জ্ঞানীগণ প্রভুর মহিমা দেখতে থেকে তা সবার জন্য প্রতিপাদন করেন, বৃদ্ধি করেন। প্রভুর বলছেন যে (আদর্দিরঃ) সমন্তাৎ সকল ব্যক্তিকে বিদরণকারী হই। প্রলয়ের সময় আমিই (ভুবনা) সব ভুবনকে (দর্দরীমি) বিদির্ণ করি।।৪।। 

সমীক্ষা: প্রভুর সত্তা বিষয়ে সন্দিগ্ধ স্তোতাকে প্রভু বলেন, হে (জরিতঃ) স্তোতা ! (অয়ং অস্মি) আমি তোমার সামনেই রয়েছি। (মা) আমায় (পশ্য) দেখো। —এইটুকুতেও সম্পষ্ট যে, তিনি সাকাররুপে স্তোতার সামনে হাজির হয়েছেন ৷ কিন্তু পরে যে ভাষ্যকার লিখেছেন “এই জগতের প্রত্যেক পদার্থে আমার সত্তা দেখতে পারবে।” —ইহা তার মনগড়া উক্তি যা তিনি অতিরিক্ত বসিয়েছে কিন্তু মূল মন্ত্রের কোনো শব্দ হতে ইহা অনুমোদিত হয় না ৷

আর আপনাদের উল্লেখিত ভাষ্যকার হরিশরণ সিদ্ধান্তলংকারের ভাষ্যে হতেও দেখিয়ে দিচ্ছি যে ঈশ্বর সাকার ৷ দেখুন,

উত ত্বাবধিরং বয়ং শ্রুতকর্ণং সন্তমুতয়ে ৷
দূরাদিহ হবামহে ৷ (ঋগ্বেদ ৮/৪৫/১৭)
(উত) আর (বয়ং) আমি (দূরান্) দূর থেকেই—আপনার উপাসক না হওয়া সত্ত্বেও (ইহ) এই জীবনে (উতয়ে) রক্ষার নিমিত্ত (ত্বা) আপনাকে (হবামহে) আহ্বান করি ৷ সেই আপনাকে আমরা আহ্বান করি যিনি (অবধিরং) বধির নন ৷ (শ্রুতকর্ণং) শ্রবণ সমর্থ কর্ণযুক্ত ৷ যার কান সদা শ্রবণ করতে ব্যস্ত ৷ (সন্তম্) যিনি শ্রেষ্ঠ ৷
[হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার কৃত হিন্দী ভাষ্য হতে ভাষান্তরিত]

অপপ্রচারকারী আরও দাবী করে, মহর্ষি শৌনক এই সুক্ত প্রসঙ্গে বৃহদ্দেবতায় বলেছেন যে, "নেম বলেছিলেন ইন্দ্র বলতে কেউ নাই। এই কথা শুনে ইন্দ্র তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে দুইটি মন্ত্র দ্বারা নিজের স্তুতি করলেন। নেম ইন্দ্রকে দর্শন করে প্রসন্ন হন!(বৃহদ্দেবতা – ৬/১১৮–১১৯)
শঙ্কার সমাধান– আমাদের প্রদত্ত উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা ও মন্ত্রের অনুবাদ পড়লে বোঝা যাবে, বৃহদ্দেবতার মূলভাব বুঝতেও সেইসব অপপ্রচারকারীদের ভুল হয়েছে। আর এখানে উল্লেখ যোগ্য বিষয় হচ্ছে, বৃহদ্দেবতায় কি বলা হচ্ছে তা মন্ত্রের অর্থ নির্ণয়ে গুরুত্বপূর্ণ নয়। কারণ এটি নিরুক্তের মতো বেদাঙ্গ অথবা শতপথাদি ব্রাহ্মণের মতো বেদের ব্যাখ্যান নয়। বরং এটি অনেক পরে রচিত একটি পরিশিষ্ট গ্রন্থ মাত্র। পরিশিষ্ট অনুসারে কখনই বেদের অর্থ করা যেতে পারে না। আর এই বৃহদ্দেবতায় উল্লেখিত "ইন্দ্র দুইটি মন্ত্র দ্বারা নিজের স্তুতি করলেন" এই বাক্য দ্বারা মূলত নিরুক্ত ৭/১–৩ এ উল্লেখিত পরোক্ষকৃত, প্রত্যক্ষকৃত ও আধ্যাত্মিক মন্ত্রের মধ্যে আধ্যাত্মিক মন্ত্রের উদাহরণ।

সমীক্ষাঃ মহর্ষি শৌনক কৃত বৃহদ্দেবতায় স্পষ্টত প্রমাণ রয়েছে যে, নেম ঋষির ইন্দ্রের দর্শনলাভ করেছিল ৷ কিন্তু নিরাকারবাদী ধূর্তগুলো তা মানবে কেন? সত্যকে গিলিয়ে খাওয়ালেও তারা মানবে না ৷ মানুষ বাঁচে আশায়, কিন্তু দয়ানন্দীরা বাঁচে শাস্ত্রের অপব্যাখ্যায় ৷

উপনিষদ, বেদান্তদর্শন, নিরুক্ত ও আর্যসমাজী হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কারের ভাষ্য থেকে আমরা সাকারত্বের প্রমাণ দিয়েছি ৷ সুতরাং ঈশ্বর, দেবতা সকলই সাকার, এই হেতু তাঁদের দর্শন লাভও অসম্ভব কিছু নয় ৷ এক্ষণে আপনাদের শঙ্কার সমাধান হয়েছে তো??
---------------------------------------------

#প্রশ্ন: যিনি সর্বব্যাপক তিনি আবার সাকাররূপে প্রকটিত হতে পারে কিভাবে?

#উত্তর: প্রাকৃত অগ্নি (সূক্ষ্মাবস্থায়) সর্বত্র ব্যাপক রূপে থেকেও যখন কোন একটি স্থানে প্রকটিত হতে পারে এবং একস্থানে প্রকটিত হয়েও সেই অগ্নির অভাব যদি অন্য কোথাও না হয়, তাহলে প্রকৃতির অতীত যে ভগবান, যিনি অলৌকিক, যাঁর সমস্ত কিছু করার সামর্থ্য আছে, তিনি যদি সমস্ত জায়গায় ব্যাপকভাবে থেকেও একটি স্থানে প্রকটিত হন তাতে আশ্চর্য হবার কিছু নাই। অর্থাৎ অবতারত্ব গ্রহণ করলেও ভগবানের সর্বব্যাপকতা যেমন তেমনি থাকে।

//ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু //

৫টি মন্তব্য:

  1. জয় শ্রী কৃষ্ণ।🙏🙏🙏
    অসাধারন জবাব।চালিয়ে যান,সঙ্গে আছি আর আজীবন থাকার প্রয়াস করব

    উত্তরমুছুন
  2. জয় শ্রী কৃষ্ণ।🙏🙏🙏
    অসাধারন জবাব।চালিয়ে যান,সঙ্গে আছি আর আজীবন থাকার প্রয়াস করব

    উত্তরমুছুন
  3. https://l.facebook.com/l.php?u=http%3A%2F%2Fback2thevedas.blogspot.com%2F2020%2F04%2Fblog-post.html%3Fm%3D1%26fbclid%3DIwAR0fI4A4Rf72G6G1UsIppkF4SXRuONaLE1TGTGF4hMoZXmr9sSXR9SBnDl4&h=AT2W1XjCcsPmNDpR9L9SMoloibp7b99PKm7sx2ZQehMDw_wiWhCLwJWbTqPyqltqu8naKAaXAFC3CCQKzJZIho-twB6wAyFCgsCkW3xOz19CyyNhaafH16u-3w_rC-yCs65D

    উত্তরমুছুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ