জীবনচরিত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
জীবনচরিত লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

রবিবার, ১২ মে, ২০১৯

শ্রীমধ্বাচার্য্য / শ্রী আনন্দ তীর্থ : জীবনী ও দার্শনিক সিদ্ধান্ত


শ্রীচৈতন্য অনুগামী বাংলার বৈষ্ণবগণ নিজেদেরকে ‘মধ্ব-গৌড়ীয়’ সম্প্রদায় বলে পরিচয় প্রদান করেন ৷ কিন্তু আমরা হয়ত অনেকেই আচার্য মধ্বের জীবন ও তার প্রচারিত শিক্ষা সম্পর্কে তেমন কিছুই জানিনা ৷ তাই আজ বৈষ্ণবগুরু শ্রীমধ্বাচার্যের জীবন ও দর্শন সম্পর্কে লিখব ৷
 মধ্ব = মধু + ব, মধু শব্দ আনন্দবাচী, ব-শব্দে জ্ঞান নির্দেশ করা হয়, তীর্থ অর্থও জ্ঞান ৷ তাই আচার্যের অপর নাম আনন্দতীর্থ ৷ এছাড়া তিনি অনুমানতীর্থ, পূর্ণপ্রজ্ঞ প্রভৃতি উপাধিও লাভ করেন ৷
শ্রীমধ্বাচার্য বায়ুর তৃতীয় অবতার রুপে প্রসিদ্ধ ৷ ত্রেতাযুগে হনুমান ও দ্বাপরযুগে ভীমরুপে আবির্ভূত হয়ে যিনি ভগবানের লীলা সহায়ক হয়েছিলেন, সেই ভগবৎ-সেবক বায়ুদেবই ভ্রান্ত মতবাদ ও শাস্ত্রের অপব্যাখ্যা নিরসনার্থে শ্রীমধ্বাচার্যরুপে অবতীর্ণ হন ৷
শ্রীমধ্বাচার্যের পিতা মধ্যগেহ ভট্ট ও মাতার নাম বেদবতী ৷ মধ্বাচার্যের বাল্য নাম ছিল বাসুদেব ৷ বাসুদেব বাল্যকালে অত্যন্ত মেধাবী ছিলেন, যথাবয়সে উপনয় গ্রহণপূর্বক সমস্ত শাস্ত্র অধ্যয়ন শেষ করে বালক বাসুদেব একদা তার পিতাকে বললেন, “আমি অদ্বৈত-মায়াবাদ খন্ডন করে জগতে বেদ প্রতিপাদ্য বৈষ্ণবসিদ্ধান্ত প্রচার করব ৷” তখন বাসুদেবের হাতে একটি লাঠি ছিল, ঐ দিকে লক্ষ্য করে বাসুদেবের কথার প্রতিত্তরে পিতা বললেন, “তুমি এখনও বালকমাত্র, তোমার দ্বারা যদি মায়াবাদ খন্ডন সম্ভব হয়, তবে তোমার হাতের লাঠিটিও মহা-বৃক্ষরুপে পরিণত হওয়া অসম্ভব নয় ৷” একথা শুনে “ভগবানের ইচ্ছায় কোন কিছুই অসম্ভব নয়” এই বলে বাসুদেব লাঠিটি মাটির মধ্যে গেঁড়ে দিলেন এবং তৎক্ষনাৎ উহা মহা-বটবৃক্ষরুপে পরিণত হলো ৷ আহা! অলৌকিক মহপুরুষদের সমস্ত কার্যই অলৌকিক ৷ এই অলৌকিক ঘটনা দেখে বাসুদেব পিতা যার পর নাই বিস্মিত হলেন এবং বুঝতে পারলেন যে তার পুত্র ভগবানের আশীর্বাদপুষ্ট ৷
আচার্য শ্রীমধ্ব অচ্যুতপ্রেক্ষ নামক এক গুরুর নিকট দীক্ষিত হয়ে সন্ন্যাসাশ্রমে প্রবিষ্ট হন ৷ আচার্য মধ্বের অবতীর্ণকালে মায়াবাদীগণের প্রবল প্রতাপ ছিল ৷ তারা অন্য মতালম্বীদেরকে স্বমতে আনার জন্য অত্যাচার পর্যন্ত করত ৷ এইকারণে গুরু অচ্যুতপ্রেক্ষ বাহ্যিকভাবে অদ্বৈতবাদী সেজে থাকলেও অন্তরে বিষ্ণুর দাস হয়ে বিষ্ণুপোসনা করতেন এবং মনমধ্যে অদ্বৈতমত খন্ডনকারী এক উপযুক্ত শিষ্যের অপেক্ষা করতেন ৷ অচ্যুতপ্রেক্ষের উপাসনায় সন্তুষ্ট হয়ে একদিন ভগবান বিষ্ণু তাকে দর্শন দেন এবং বলেন “তোমার নিকট শিষ্য হতে অতিশীঘ্র একজন আসবে, তুমি তাকে পুত্রতুল্য জ্ঞান করিও ৷” এরপরই মধ্বাচার্যের সহিত অচ্যুতপ্রেক্ষের সাক্ষাৎ ঘটে এবং মধ্বাচার্য অচ্যুতপ্রেক্ষের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ৷ এরপর তিনি গুরুকে সঙ্গে নিয়ে দ্বিগবিজয়ে বহির্গত হন এবং যুক্তি-তর্কবলে সমস্ত অদ্বৈতবাদী পণ্ডিতগণকে পরাস্ত করতে থাকেন ৷ এসময় অনেকেই অদ্বৈতমতের ভ্রান্তি উপলব্ধি করে আচার্য্য আনন্দতীর্থের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন ৷
আচার্য্য আনন্দতীর্থ শিষ্যগণের সহিত সর্বত্র বিষ্ণুর মহিমা প্রচারকালে একদা বাদরিকাশ্রমে গিয়ে উপস্থিত হন ৷ তারপর বাদিরকাশ্রম থেকে ব্যাসাশ্রমে যান, সেখানে ব্যাসদেব সদাস্থিত হলেও স্বীয় যোগবলে সাধারণের নিকট অদৃশ্য থাকেন ৷ কিন্তু তিনি স্বেচ্ছায় মধ্বাচার্যকে দর্শন দেন, তথায় আচার্য মধ্ব ব্যাসদেবের নিকট শিষ্যরুপে অবস্থানপূর্বক স্বয়ং ব্যাসের মুখ থেকে শ্রুতির পরম অর্থ শ্রবণ করেন এবং ব্যাসদেবের অভিপ্রায় অনুযায়ী শাস্ত্রসিদ্ধান্ত প্রচারের উপদেশ লাভ করেন ৷
এরপর আচার্য আনন্দতীর্থ ব্যাসদেবের অভিপ্রেত অনুসারে বেদাদি শাস্ত্রের ওপর দ্বৈতপর ও বিষ্ণুর মাহাত্ম্য প্রতিপাদক ভাষ্য রচনা করেন ৷ তাঁর গ্রন্থাদি নিম্নরুপ ৷—
* ঋগ্-ভাষ্য 
* ঈশ-কেন-কঠ-মুন্ডুক-মান্ডুক্য-তৈত্তিরীয়-ঐতরেয়-প্রশ্ন-ছান্দোগ্য ও বৃহদারণ্যক উপনিষদ ভাষ্য
* ব্রহ্মসূত্রভাষ্য, অনুভাষ্য বা অনুব্যাখ্যান ও অণুভাষ্য
* গীতাভাষ্য ও গীতা তাৎপর্য নির্ণয়
* মহাভারত তাৎপর্য নির্ণয়
* ভাগবত তাৎপর্য নির্ণয়

এবার, আচার্য্যের দার্শনিক সিদ্ধান্ত সম্পর্কে কিছুটা আলোকপাত করা যাক— ৷৷
দার্শনিক সিদ্ধান্তের দিক দিয়ে মধ্বাচার্য শঙ্করাচার্যের প্রবল বিরোধী ৷ শঙ্করাচার্য অদ্বৈতবাদী, মধ্বাচার্য দ্বৈতবাদী ৷ শঙ্করাচার্য বলেন জীব ও ব্রহ্ম এক বস্তু, অপরদিকে মধ্বাচার্য বলেন জীব ও ব্রহ্ম আলাদা ৷ শঙ্করাচার্য বলেন ব্রহ্ম সত্য জগৎ মিথ্যা ; মধ্বাচার্য বলেন জগৎ মিথ্যা নয়, বরং তোমাদের মিথ্যাবাদটাই মিথ্যা ৷
শঙ্কর মতালম্বীগণ বলেন, জগতকে ‘প্রপঞ্চ’ বলা হয়, যার অর্থ সত্যের ন্যায় প্রতীয়মান হয় মাত্র, বাস্তবিক সত্য নয় ৷ মধ্বাচার্য বলে প্রপঞ্চ অর্থ উহা নয়, প্রপঞ্চ = প্রকৃষ্ট পঞ্চভেদ ৷ যথা—
১৷ ঈশ্বর ও জীবে ভেদ
২৷ ঈশ্বর ও জড়তে ভেদ
৩৷ জীব ও জীবে ভেদ
৪৷ জীব ও জড়তে ভেদ
৫৷ জড় ও জড়তে ভেদ
শঙ্করাচার্য ‘তত্ত্বমসি’ প্রভৃতি যেসকল শ্রুতিবাক্য দ্বারা জীব ও ব্রহ্মের অভেদ একত্ব নির্ণয় করেন, মধ্বাচার্য সেই সকল শ্রুতিই ব্যাখ্যা করে জীব-ব্রহ্মের ভেদ প্রতিপাদন করেছেন ৷
সর্বদর্শন সংগ্রহকার শ্রীমৎ সায়ণ-মাধব লিখেছেন— “আনন্দ তীর্থ শারীরক মীমাংসার যে ভাষ্য করিয়াছেন তাহাতে দৃষ্টিপাত করিলে জীব ও ঈশ্বরের পরস্পর যে ভেদ আছে তদ্বিষয়ে আর কোন সংশয়ই থাকে না। ঐ ভাষ্যে লিখিত হইয়াছে “স আত্মা তত্ত্বমসি শ্বেতকেতো,” এই শ্রুতির, জীব ও ঈশ্বরের পরস্পর ভেদ নাই এরূপ তাৎপর্য্য নহে । কিন্তু “তস্য ত্বং” অর্থাৎ “তাঁহার তুমি” এই ষষ্ঠী সমাস দ্বারা উহাতে “জীব, ঈশ্বরের সেবক” এই অর্থই বুঝাইবে। আর এরূপ যোজনা দ্বারা এমন অর্থও বুঝাইতে পারে যে জীব, ব্রহ্ম হইতে ভিন্ন। এই মতে দুই তত্ত্ব স্বতন্ত্র ও অস্বতন্ত্র। তন্মধ্যে ভগবান সর্ব্বদোষবিবর্জিত অশেষ সদগুণের আশ্রয় স্বরূপ বিষ্ণুই স্বতন্ত্রতত্ত্ব। এবং জীবগণ অস্বতন্ত্রতত্ত্ব অর্থাৎ ঈশ্বরায়ত্ত। এই রূপে সেব্যসেবক ভাবাবলম্বী ঈশ্বর জীবের পরস্পর ভেদও যুক্তিসিদ্ধ হইতেছে, যেমন রাজা ও ভৃত্যের পরস্পর ভেদ দৃষ্ট হইয়া থাকে।” (সর্বদর্শন-সংগ্রহ, ‘পূর্ণপ্রজ্ঞদর্শন’ নামক পরিচ্ছেদ)

শ্রী আনন্দতীর্থ (মধ্বাচার্য) অদ্বৈত-মায়াবাদ খন্ডনার্থে বিশেষত এই গ্রন্থগুলো লিখেন—
* উপাধি খন্ডন
* মায়াবাদ খন্ডন
* প্রপঞ্চ-মিথ্যাত্বানুমান খন্ডন
এছাড়া তিনি ভক্তিমূলক অনেক গ্রন্থাদিও লিখেছেন ৷


আচার্য্য শ্রী আনন্দতীর্থের জয় হোক ৷৷
// ওঁ হরি ওঁ //

বুধবার, ২২ নভেম্বর, ২০১৭

কুমারিল ভট্ট


বেদজ্ঞানী সেনাপতিরাই আমাদের ধর্ম রক্ষাকারী ৷ কোন যোদ্ধার তরবারি নয়, বৈদিক মন্ত্রই আমাদের রক্ষাকবচ ।
আজ তেমনি এক বৈদিক সেনানায়কের কথা আপনাদের কাছে তুলে ধরবো যার নাম ‘কুমারিল ভট্ট’।

কুমারিল ভট্টের জন্ম ৭০০ খ্রীষ্টাব্দের মধ্যে, তিনি দক্ষিণ ভারতীয় ব্রাহ্মণ ছিলেন । তাঁর জন্মস্থান চোলদেশে । তাঁর আবির্ভাব কালে সমগ্র ভারত বৌদ্ধ এবং জৈন ধর্মের কদর্য ধর্মাচারে আক্রান্ত ছিল। ভারতে বৈদিকধর্মের পুনঃপ্রতিষ্ঠাকালে উনি ছিলেন প্রধান সেনাপতি। কুমারিল বৌদ্ধ জৈন প্রভৃতি ভারতের যাবতীয় অবৈদিক ধর্মাবলম্বিগণকে বিচারে পরাজিত করে বৈদিকধর্মের কর্মকাণ্ডের পুণঃপ্রতিষ্ঠা করেন। বৌদ্ধ, জৈনরা যেমন বেদবিরোধী ছিল, উনি তেমনি বেদানুরাগী, বৌদ্ধরা যেমন বেদ ছেদনকারী, ইনি তেমনি বেদ প্রতিষ্ঠাকারী।

কুমারিল ভট্ট শৈশব থেকেই বেদানুরাগী ছিলেন এবং পরে একজন বেদজ্ঞ পণ্ডিত হয়ে ওঠেন ।
কুমারিল ছিলেন প্রসিদ্ধ বৌদ্ধ পণ্ডিত ধর্মকীর্তির কাকা। ধর্মকীর্তি ১৮ বছর বয়সের মধ্যে বেদ বেদাঙ্গ ব্যাকরণ সর্বশাস্ত্রপারগামী হন। ধর্মকীর্তি শাস্ত্রজ্ঞানের জন্য কুমারিলেরর শিষ্য হন। কিন্তু বৌদ্ধধর্মে আকৃষ্ট হয়ে মগধদেশীয় প্রসিদ্ধ বৌদ্ধগুরু ধর্মপালের শিষ্য হন। এই ধর্মপালের কাছে বৌদ্ধমত শিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে ধর্মকীর্তি কুমারিলকে বিচারে পারাজিত করে আর অন্ধ স্নেহে কুমারিলও তার পরাজয় স্বীকার করে এবং পণ-অনুসারে বৌদ্ধ হতে বাধ্য হন।
ফলতঃ নালন্দা এসে ধর্মপালের শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন। বৌদ্ধ ন্যায়শাস্ত্র শিক্ষা করতে থাকেন কিন্তু কুমারিল অন্তরে বৈদিক থেকে যান। একদিন বৌদ্ধগুরু সভামধ্যে শাস্ত্রব্যাখ্যা করেছিলেন। বহু শ্রোতাদর্শক এবং কুমারিল এবং অন্যান্য শিষ্য সেই উপস্থিত ছিলেন। বৌদ্ধ গুরু শাস্ত্রব্যাখ্যা করতে করতে ভীষণভাবে বেদের নিন্দা করতে লাগলো, কুমারিল পক্ষে অসহ্য লাগতে লাগলো এই বেদ নিন্দা। তিনি নীরবে অশ্রু বিসর্জন করতে লাগলেন। অন্যান্য ভিক্ষু এবং গুরু বিরক্ত হয়ে কুমারিল কে বলেন, “আপনার ক্রন্দনের কারন কি?? মনে হচ্ছে আপনার বেদের উপর শ্রদ্ধা এখনও যায় নি এবং আপনি ভান করে বৌদ্ধ সেজে আমাদের বিদ্যা গ্রহণ করছেন।”
কুমারিল গুরুবাক্যে মর্মাহত হয়ে উত্তেজিত হয়ে বিনীতভাবে বললেন, “আপনি বেদবিষয়ে অযথা নিন্দা করছেন এটাই আমার রোদনের হেতু।”
এতে গুরু আরো রুষ্ট হলেন কুমারিরকে তর্কে আহ্বান করলেন ক্রমে গুরুর সঙ্গে কুমারিল বেদের প্রামাণ্য নিয়ে ভীষণ বিচার আরাম্ভ হলো। বহুক্ষণ বিচারের পর বৌদ্ধ গুরু কুমারিলের যুক্তিশরে জর্জরিত হতে লাগলেন। শেষে কুমারিল বললেন “সর্বজ্ঞের উপদেশ ভিন্ন জীব সর্বজ্ঞ হইতেই পারে না। বুদ্ধ বেদজ্ঞানে জ্ঞানী হইয়া বেদ মানেন নাই— ইহা তাহার চৌর্য ভিন্ন আর কি?” এই শুনে বৌদ্ধগুরু ক্রুদ্ধ হয়ে বলেন, “তোমায় এই উচ্চ প্রাসাদ হইতে ফেলিয়া দিয়ে প্রাণবধ করা উচিত ৷” গুরুর কথা শুনে আগের থেকে উত্তেজিত বৌদ্ধ শিষ্যরা কুমারিল কে বলপূর্বক উঁচু প্রাসাদ থেকে ফেলে দিলেন। পতনকালে কুমারিল উচ্চৈঃস্বরে বললেন, “বেদ যদি প্রমাণ হয়, তাহা হইলে আমি যেন অক্ষত শরীরে জীবিত থাকি ৷”
মাটিতে পরেও কুমারিল প্রাণ গেলোনা এমনকি বিশেষ আঘাতো পেলেননা। বৌদ্বরা এই দেখে একেবারে স্তম্ভিত হয়ে গেলেন । কুমারিল তখন বললেন, “ওহে অহিংসাপরায়ণ বৌদ্ধগণ! আমি দেখিতেছি আমার একটি চক্ষুতে একটুমাত্র আঘাত লাগিয়াছে। আমার এ ক্ষতিও হইত না, যদি আমি ‘বেদ যদি প্রমাণ হয়’ এইরূপ সংশয়াত্মক বাক্যপ্রয়োগ না করিতাম ৷” বৌদ্ধগণ তখন কুমারিল দৈবশক্তি দেখে পালিয়ে গেলো এবং চিন্তিত ও শঙ্কিত হয়ে পরলেন । পরবর্তীকালে বৌদ্বরা এক বিরাট বিচারের ব্যাবস্থা করলেন। দেশবিদেশ থেকে বৈদিক এবং বৌদ্ধ পণ্ডিতরা সেখানে উপস্থিত হলেন। দেশের রাজাদের সামনে বৌদ্ধগুরু এই পণ রাখলেন বিজেতার মত গ্রহণ অথবা তুষানলে প্রাণত্যাগ উভয় পক্ষ এই পণে সম্মত হলেন। এই তর্কসভায় কুমারিলর ভ্রাতুষ্পুত্র ধর্মকীর্তিও উপস্থিত ছিলেন। বৌদ্ধরা যথাসাধ্য চেষ্টার পরেও কুমারিল কাছে হার স্বীকার করলো। তখন বৌদ্ধ গুরু বললেন, “আমি বিচারে পরাজিত হইয়াছি বটে, কিন্তু আমি বেদকে স্বীকার করবো না, যাহা হউক আমি ভগবান বুদ্ধের মত ত্যাগ করিব না, প্রাণত্যাগ আমি বরং করিলাম ৷” তুষানলে সর্বসমক্ষে প্রাণ ত্যাগ করলেন।

এরপর কুমারিল জৈনগণকে পরাস্ত করে দক্ষিণ বিজয় করেন ৷ এসময় বহু জৈন বৈদিকধর্মে ফিরে আসে ৷ কুমারিল কেবল দ্বিগবিজয় করেই ক্ষান্ত হননি, তিনি বৈদিক যাগ-যজ্ঞাদির ফল প্রদর্শন করে সকলকে বৈদিকধর্মের প্রতি শ্রদ্ধালু করতেন ৷ তার প্রচেষ্ঠাতেই তখন বেদ-বেদান্তের পঠনপাঠন পুণরায় আরম্ভ হয় ৷ নতুবা বৌদ্ধ ও জৈনগণ যেরুপে বৈদিকগ্রন্থাদি ভস্মাৎ করেছিল এবং যেভাবে রাজশক্তিবলে নিজ নিজ মত প্রতিষ্ঠা করেছিল তাতে আর বৈদিকধর্মের পুণঃপ্রতিষ্ঠার আশা ছিল না ৷


(শঙ্করাচার্য ও কুমারিল ভট্ট)


                   Related post : শঙ্করাচার্য ও বেদান্ত-দর্শন


সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ