সাকারবাদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
সাকারবাদ লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শনিবার, ৩ এপ্রিল, ২০২১

বিস্ময়কর ব্যাখ্যা : ন তস্য প্রতিমা অস্তি






শুক্লযজুর্বেদের “ন তস্য প্রতিমা অস্তি” এই শ্রুতি বাক্যটুকু সকলের পরিচিত ৷ এই শ্রুতি বাক্যটুকু দিয়েই দয়ানন্দ সরস্বতী, রাজা রামমোহন রায় প্রভৃতি মূর্তিপূজা বিরোধীরা মূর্তিপূজার বিরোধীতা করেছিলেন ৷ অপরপক্ষে সনাতনধর্মাবলম্বী পণ্ডিতগণ এই শ্রুতি বাক্যকে মূর্তিপূজার বিরোধী মনে করেন না ৷ কারণ প্রতিমা শব্দের অর্থ কেবল মূর্তি বা প্রতিকৃতিই নয়, প্রতিমা অর্থ তুলনা, সাদৃশ্য ইত্যাদি অর্থও রয়েছে ৷ সুতরাং “ন তস্য প্রতিমা অস্তি” অর্থ তাঁর তুলনার পাত্র বা সাদৃশ্যমান কেউ নাই ৷ 

যাহোক না কেন, বস্তুত দয়ানন্দ সরস্বতী, রাজা রামমোহন রায়, হযরত মুহাম্মদ প্রভৃতি যত ছিরুই পৃথিবীতে জন্মগ্রহণ করুক না কেন, সনাতনধর্ম থেকে প্রতিমা পূজার উচ্ছেদ কেউ কোনদিন করতে পারবে না ৷ 

এখন আসি মূল প্রসঙ্গে ৷ উপর্যুক্ত ব্যাখ্যা ছাড়াও ঐ শ্রুতিবাক্যের একটি বিস্ময়কর ব্যাখ্যা পেয়েছি, সেটিই বলব ৷ সাধারণ প্রচলিত ব্যাখ্যাগুলোতে “ন” আর “তস্য” শব্দ দুটিকে দুটি ভিন্ন পদ মানা হয় ৷ কিন্তু বিস্ময়কর ব্যাখ্যাটি যিনি দিয়েছেন, তাঁর নাম বলতে আমি অনিচ্ছুক, তিনি মনে করেন “ন” আর “তস্য” দুটি ভিন্ন পদ নয়; মূলত এখানে একটি পদ, অর্থাৎ এরূপ “নতস্য” ৷ এখানে ‘নত’ শব্দের সাথে ষষ্ঠী বিভক্তি প্রয়োগে ‘নতস্য’ হয়েছে ৷ 

তাহলে “নতস্য প্রতিমা অস্তি” এর অর্থ হচ্ছে--

 নতস্য= ‘নত’ এর অর্থাৎ নতজানু ; প্রতিমা= মূর্তি ; অস্তি= আছে ৷ পরমেশ্বর রাম-কৃষ্ণ প্রভৃতি রূপে শিশুকালে নতজানু হয়ে হামাগুড়ি দিয়ে লীলা করেছেন, সেই নতজানু হামাগুড়িরূপে পরমেশ্বরের প্রতিমা জগতে বিদ্যমান রয়েছে --এই অর্থ ৷ 



 

ব্যাখ্যাটি আমার কাছে ইন্টারেস্টিং লেগেছে, তাই আপনাদের সাথে শেয়ার করলাম ৷ আপনাদের কেমন লাগল, মতামত জানান ৷ ধন্যবাদ ৷ 

//ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু //

শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮

শ্বেতাশ্বতর উপনিষদের নিরাকারবোধক শ্রুতির তাৎপর্য বিশ্লেষণ


শ্বেতাশ্বতর উপনিষদ (৩/১৭, ১৯) এর অযৌক্তিক অনুবাদ তুলে ধরে নিরাকারবাদী দয়ানন্দপ্রিয় মূর্খগুলো দেখি একটা তৃপ্তির ঢেকুর তুলে, উক্ত শ্লোকদ্বয়ের যথার্থ তাৎপর্য না বুঝেই তারা আনন্দে এই ঢেকুর তুলে, আসলে মন্ত্রটি তে কি বুঝানো হয়েছে? আসুন তার সন্ধান করি.....
তাদের উপস্থিত অনুবাদ ৷—
“তিনি নিখিল ইন্দ্রিয়ের গুণবিশিষ্ট- রুপে প্রতিভাত হন, অথচ তিনি সমুদয় ইন্দ্রিয়ব্যাপার-শূন্য।” (৩/১৭) এবং “তাহার হস্তপদ না থাকিলেও তিনি দ্রুত গমন করেন এবং সর্ববস্তু গ্রহণ করেন, চক্ষু না থাকিলেও দর্শন করেন, কর্ণ না থাকিলেও শ্রবণ করেন।” (৩/১৯)
যেহেতু কারণ বিনা কার্য্য হয় না, তাই গমন, গ্রহণ, দর্শন, শ্রবণ ইত্যাদি কার্য্য আছে, কিন্তু এই কার্য্যের কারণরূপ ইন্দ্রিয় নাই —এ বড় হাস্যকর কথা ৷ এইকথাগুলো এরুপ যে— দয়ানন্দজীর মাতা বন্ধ্যা ছিল, কিন্তু দয়ানন্দ জন্মিল অর্থাৎ তিনি বন্ধ্যাপুত্র ; গর্তে সাপ ছিলনা, কিন্তু বাহির হয়ে আসিল... ইত্যাদি ৷ এইরুপ অযৌক্তিক প্রলাপ কখনোই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না ৷ অতএব এই শ্রুতির উদ্দেশ্যে মহাপ্রভু শ্রীচৈতন্যদেব যাহা বলিয়াছেন তাহাই প্রণিধানযোগ্য, তিনি বলেছেন—
‘অপাণিপাদ শ্রুতি বর্জে প্রাকৃত পাণিচরণ ৷’
অর্থাৎ এই শ্রুতি কেবল প্রাকৃত হস্ত-পদাদিই বর্জন করেছে, তাঁর অপ্রাকৃত হস্ত-পদাদি আছে, তা না থাকলে গমন-দর্শন-শ্রবণাদি আদৌ সম্ভব হতো না ৷
.
উক্ত শ্লোকদ্বয়ের শ্রীশ্যামলাল গোস্বামী কৃত অনুবাদ দেখুন ৷—
সর্ব্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং সর্ব্বেন্দ্রিয়বিবর্জ্জিতম্ ৷
সর্ব্বস্য প্রভুমীশানং সর্ব্বস্য শরণং সুহৃৎ।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩৷১৭
শ্রীভগবানের শরীর অপ্রাকৃত, অতএব উহার প্রত্যেক অবয়বে (সর্ব্বেন্দ্রিয়গুণাভাসং) সকল ইন্দ্রিয়ের ধর্ম্মই প্রকাশ পাইয়া থাকে ৷ (সর্ব্বেন্দ্রিয়বিবর্জ্জিতম্) তাঁহার প্রাকৃত কোন ইন্দ্রিয়ই নাই ৷ (সর্ব্বস্য প্রভুমীশানং) তিনি সকলের প্রভু ও নিয়ন্তা; (সর্ব্বস্য শরণং সুহৃৎ) তিনি সকলের সুহৃৎ ও আশ্রয় ৷
.
অপাণিপাদো জবনো গ্রহীতা
          পশ্যত্যচক্ষুঃ স শৃণোত্যকর্ণঃ।
স বেত্তি বেদ্যং ন চ তস্যাস্তি বেত্তা
            তমাহুরগ্র্যং পুরুষং মহান্তম্।।
➢ শ্বেতাশ্বতরোপনিষৎ ৩৷১৯
সেই ভগবান্ (অপাণিপাদঃ) প্রাকৃতপাণিপাদরহিত হইয়াও (জবনঃ) গমন ও  (গ্রহীতা) গ্রহণ করিয়া থাকেন ৷ (পশ্যত্যচক্ষুঃ স) তিনি প্রাকৃতনেত্রবর্জ্জিত হইয়াও দর্শন করেন এবং (শৃণোত্যকর্ণঃ) প্রাকৃতকর্ণশূণ্য হইয়াও শ্রবণ করেন ৷ (স বেত্তি বেদ্যং) তিনি জ্ঞেয়মাত্রই জানেন, কিন্তু সকলের সাক্ষী বলিয়া (ন চ তস্যাস্তি বেত্তা) তাঁহাকে কেহই জানিতে পারেন না ৷ (তমাহুরগ্র্যং) ব্রহ্মবিদগণ তাঁহাকে আদি ও (পুরুষং মহান্তম্) মহান পুরুষ বলিয়া থাকেন ৷
.
অধিকন্তু, এই উপনিষদেই পরমেশ্বরের অপ্রাকৃত রূপের বর্ণনা আছে যা কিনা ঐ অত্যন্ত-নিরাকারবাদীদের দৃষ্টিগোচর হয়না, যদি হতো তবে আর আনন্দে ঢেকুর তোলা আসত না ৷—
.
যা তে রুদ্র শিবা তনূরঘোরাহ’পাপকাশিনী ৷
তয়া নস্তনুবা শন্তময়া গিরিশন্তাভিচাকশীহি ৷৷
— “হে রুদ্ররূপধারিন্ পরমেশ্বর, তোমার যে  মঙ্গলময়, সৌম্য, পুণ্যপ্রদ শরীর আছে, হে গিরিশ, সে সুখতম শরীরের দ্বারা আমাদের দিকে তাকাও ৷”
(যজুর্বেদ ১৬/২, শ্বেতাশ্বতর ৩/৫)
.
যামিষুং গিরিশন্ত হস্তে বিভর্ষ্যস্তমে ৷
শিবাং গিরিত্র তাং কুরু মা হিংসীঃ পুরুষং জগৎ ৷৷
— “হে গিরিশ, শত্রুর প্রতি নিক্ষেপের জন্য হস্তে যে বাণ ধারণ করেছ, হে প্রাণিগণের ত্রাতা, তা কল্যাণকর কর, পুরুষ ও জগতের হিংসা করো না ৷”
(যজুর্বেদ ১৬/৩, শ্বেতাশ্বতর ৩/৬)
.
অজাত ইত্যেবং কশ্চিদ্ভীরুঃ প্রতিপদ্যতে।
রুদ্র যত্তে দক্ষিণং মুখং তেন মাং পাহি নিত্যং।৷
 — “তোমাকে অজাত জেনে কেহ তোমার কাছে আসে আর তার চিত্ত ভয়ব্যাকুল হয় ৷ হে রুদ্র, হে ভীষণ, তোমার সেই যে অন্য হাস্যময় প্রসন্ন মুখমন্ডল, তার মধুর হাসি দিয়ে তুমি আমায় রক্ষা কর সর্বদা ৷” (শ্বেতাশ্বতর ৪/২১)
.
দয়ানন্দ অনুরাগী বালকগুলো নিতান্ত অভক্ত, তাই তারা পরমেশ্বরের রূপ দর্শনের অযোগ্য ৷ যেমন এক ধূর্ত শেয়াল ফাঁদে পড়ে নিজের লেজ হারিয়ে, অন্য শেয়ালদেরও লেজ কাঁটাতে চেয়েছিল; তদ্রুপ এই নিরাকারবাদী ধূর্তগুলো নিজেরা পরমেশ্বরের রূপ দর্শনের অযোগ্য হয়ে, অন্যদেরও অযোগ্য করার মানসে কেবল নিরাকার নিরাকার বলিয়া শৃগালে ন্যায় চিৎকার করিয়া  বেড়ায় ৷ অতএব, সারকথা এই যে— পরমেশ্বের স্বরূপভূত আকার থাকলেও, অভক্তদের তাঁকে দর্শনের যোগ্যতা না থাকায় তাদের কাছে তিনি নিরাকার বলিয়া প্রতিভাত হন ৷৷


সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ