শনিবার, ৩ মার্চ, ২০১৮

বৈদিক ঋষির কৃষ্ণ দর্শন




জগতের স্রষ্টা বলে কি কেউ আদৌ আছেন? যদি থাকেন, তবে সেই জগদীশ্বর শ্রীভগবানকে কি দর্শন করা যায়? কেউ কি তাঁকে প্রত্যক্ষ করেছে? নতুবা এ কেবলই অন্ধবিশ্বাস? যারা বলে ঈশ্বর নিরাকার ও তাঁকে দেখা যায় না, তারা কেবল অন্ধবিশ্বাসের ওপরই জীবন ব্যয় করছে ছাড়া আর কি? কিন্তু বৈদিক সনাতন ধর্ম অন্ধবিশ্বাসের ওপর প্রতিষ্ঠিত নয়, বেদদ্রষ্টা ঋষিগণ পরমেশ্বরের সাক্ষাৎ প্রাপ্ত হয়েছিলেন ৷ ভগবদ্ভক্ত সাধক ভগবানের দর্শন প্রাপ্ত হন, ইহা নিত্য সত্য ব্যাপার ৷ ইহার দৃষ্টান্ত তাই বেদে দেখতে পাই —
.
“নেম ঋষি বলেন, ইন্দ্র নামে কেউ নেই! কে তাকে দেখেছে? আমরা কাকে স্তুতি করব?” (ঋঃ ৮৷১০০৷৩)
পরমৈশ্বর্যবান ভগবান (ইন্দ্র) তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে বলছেন— “হে স্তোতা, এ আমি তোমার নিকট এসেছি, আমাকে দর্শণ কর ৷ সমস্ত ভুবনকে আমি মহিমা দ্বারা অভিভূত করি ৷ যজ্ঞের প্রদেষ্টৃগণ আমাকে বর্ধিত করে, আমি বিদারণশীল ভূমি বিদীর্ণ করি ৷” (ঋঃ ৮৷১০০৷৪)
.
(এখানে দয়ানন্দ অনুরাগী বালকগুলো হয়ত জয়দেব শর্মার গাঁজাখুরি অনুবাদ দেখাবে ৷ কিন্তু ঐ গাঁজাখুরি অনুবাদ যে ভুল তার প্রমাণ—)
.
 মহর্ষি শৌণক (৮৷১০০) এই সূক্ত প্রসঙ্গে বলেছেন যে- ‘ভৃগুপুত্র নেম বলেছিলেন ইন্দ্র বলতে কেউ নাই ৷ একথা শুনে ইন্দ্র তার সম্মুখে আবির্ভূত হয়ে তাকে দর্শন দেন এবং ৪ ও ৫ নং মন্ত্র স্বয়ং ইন্দ্রের বাক্য ৷ নেম ঋষি ইদ্রদেবকে দর্শন করে যার পর নাই আনন্দিত হন ৷’ (বৃহদ্দেবতা ৬/১১৭-১১৯)
.
ভগবদ্দর্শনের আরো একটি স্পষ্ট স্বীকারোক্তি পাই ৷—
.
ঋগ্বেদ সংহিতা
মন্ডল-১ ৷ সূক্ত-২৫ ৷ মন্ত্র-১৮
দেবতা- বরুণ ৷ ঋষি- শুনঃশেপ
.
দর্শং নু বিশ্বদর্শতং দর্শং রথমধি ক্ষমি ৷
এতা জুষত মে গিরঃ ৷৷
.
সায়ণভাষ্যঃ (বিশ্বদর্শতং) সর্ব্বজন-দর্শনীয়, এবং আমাদিগের প্রতি কেবল অনুগ্রহের নিমিত্ত আবির্ভূত বরুণদেবকে (দর্শং নু) আমি নিশ্চিতভাবে দেখিয়াছি ; এবং (দর্শং রথমধি ক্ষমি) এই ভূমি তথা পৃথিবীতে বরুণদেবের রথকে প্রকাশ্যভাবে দেখিয়াছি, (এতা মে গিরঃ) আর আমি যেসমস্ত স্তুতি উচ্চারণ করিতেছি, সেই বরুণদেব আমার সেই সমস্ত স্তুতি (জুষত) সেবা অর্থাৎ গ্রহণ করিয়াছেন ৷
 ‘দর্শং’ এই পদটি ‘ইরিতো বা’ (পাণিনি ৩৷১৷৫৭) এই সূত্রানুসারে ‘চির’ স্থানে ‘অঙ’ আদেশ এবং ‘ঋদৃশোহঙি গুণঃ’ (পাণিনি ৭৷৪৷১৬) এই সূত্র দ্বারা গুণ করিয়া সিদ্ধ হইয়াছে ৷ ‘বিশ্বদর্শতং’ এই পদে ‘দৃশ’ ধাতুর উত্তর ‘ভৃমৃদৃশি’ ইত্যাদি সূত্র দ্বারা ‘অতচ্’ প্রত্যয় দ্বারা ‘দর্শত’ পদ নিষ্পন্ন হইয়াছে ৷  ...... অথবা বিশ্ব অর্থাৎ সমস্ত দর্শনীয় হয় ইহার— এইরুপ বহুব্রীহি সমাস হইলে ‘বিশ্বং সংজ্ঞায়াম’ (পাণিনি ৬৷২৷১০৬)..... ৷
.
(হে মনুষ্য! রথে উপবিষ্ট ভগবান শ্রীকৃষ্ণকে কি তুমি দেখ নাই?)
.
শ্রীদূর্গাদাস লাহিড়ী শর্ম্মন এইরুপ অনুবাদ করেছেন :—
“সেই সর্ব্বদর্শী ভগবানকে আমি নিশ্চয় দেখিয়াছি ; পৃথিবীতে তাঁহার গতিবিধি সম্যকরূপে আমার দৃষ্টিগোচর হইয়াছে ৷ আমার উচ্চারিত স্তোত্রসমুদায় তাঁহার নিকট পৌছয়াছে (তিনি আমার স্তোত্রসমুদায় প্রাপ্ত হইয়াছেন)৷”
.
সায়ণ ভাষ্য মানি না, বা দূর্গাদাসকে চিনি না ইত্যাদি বলে অনেকে পালানোর পথ খুঁজতে পারে, তাদের জন্য আর্যসমাজী সত্য প্রকাশ সরস্বতী কৃত অনুবাদ দিলাম :—
“ I have seen Him whom all may see. I am feeling the presence of His divine chariot above the earth—His activity around us—I am sure that He has accepted my devotional songs. ”
.
(যেখানে সকলের অনুবাদেই মূল বিষয়ে সাদৃশ্য রয়েছে, সেখানে দয়ানন্দ এই মন্ত্রের কিরুপ গাঁজাখুরি অর্থ করেছে তা সকলে নিজ দায়িত্বে দেখে নিবেন)
.

হে কৃষ্ণ “বায়ু, যম, অগ্নি, বরুণ, তুমিই ৷ পিতামহ ব্রহ্মাও তুমি এবং ব্রহ্মার জনকও তুমি ৷ তোমাকে সহস্র বার নমস্কার করি, আবারও পুণঃ পুণঃ তোমাকে নমস্কার করি ৷” (গীতা ১১/৩৯)
.
তুমি স্বয়ংই বলেছো—
“বেদৈশ্চ সর্বৈরহমেব বেদ্যো বেদান্তকৃদ্ বেদবিদেব চাহম্”
অর্থাৎ, আমিই সমস্ত বেদের জ্ঞাতব্য এবং আমিই বেদান্তকর্তা ও বেদবিৎ (১৫/১৫)৷

.
এইবার প্রশ্ন হচ্ছে, আমাদের ভগবদ্দর্শনের উপায় কি?
.

মহর্ষি পাতঞ্জল বলেছেন— “স্বাধ্যায়াদিষ্টদেবতাসম্প্রয়োগঃ” ৷৷
অর্থ—‘সাধ্যায় দ্বারা ইষ্টদেবতার দর্শন (সাক্ষাৎকার) হয় ৷’ [যোগদর্শন ২/৪৪]

এবং দেবর্ষি নারদ (ভক্তিসূত্র- ৮০) বলেছেন—
‘স কীর্ত্যমানঃ শীঘ্রমেবাবির্ভবতি অনুভাবয়তি চ ভক্তান্‘৷৷
অর্থ—“ভজনায় তুষ্ট ভগবান শীঘ্রই (ভক্তের নিকট) আবির্ভূত হন এবং ভক্তদের তাঁর অনুভব করতে দেন ৷”
.
৷৷ ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু ৷৷



কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ