শঙ্করাচার্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান
শঙ্করাচার্য লেবেলটি সহ পোস্টগুলি দেখানো হচ্ছে৷ সকল পোস্ট দেখান

শুক্রবার, ১ ডিসেম্বর, ২০১৭

শঙ্করাচার্য ও বেদান্ত-দর্শন

বেদান্ত দর্শনের মাহাত্ম্য


অামাদের সনাতনধর্মের গ্রন্থ ভান্ডারে রয়েছে ছয়টি দর্শন শাস্ত্র ৷ এই ষড়দর্শনগুলো হচ্ছে—

১) বৈশেষিক দর্শন —আচার্য কণাদ
২) ন্যায়দর্শন  —মহর্ষি গৌতম
৩) সাংখ্যদর্শন —কপিল মুনি
৪) যোগদর্শন —মহর্ষি পাতঞ্জল
৫) পূর্বমীমাংসা বা কর্মমীমাংসা দর্শন —মহর্ষি জৈমনি
৬) বেদান্তদর্শন বা ব্রহ্মসূত্র —মহর্ষি বাদরায়ণ ব্যাসদেব

 প্রথম চারটি দর্শনের পর পূর্বমীমাংসা এবং শেষে হয় বেদান্তদর্শন পড়তে হয় । কেননা ঐগুলো প্রথমে বুঝে নিলে বেদান্তদর্শন বুঝতে সহজ হয় ৷ পূর্ব-মীমাংসায় বর্ণিত হয়েছে কর্মমার্গ, আর বেদান্তদর্শনে বর্ণিত হয়েছে জ্ঞানমার্গ ৷ কর্মমার্গের অনুসারীদের কর্মবাদী ও জ্ঞানমার্গের অনুসারীদের বলা হয় জ্ঞানবাদী ৷ আদিগুরু শঙ্করাচার্যের সময় পূর্বমীমাংসক বা কর্মবাদীদের বলা হতো প্রধানমল্ল । কারণ তখন মীমাংসা দর্শনের এতো শক্তিশালী প্রভাব ছিল যে যদি কেউ মীমাংসকদের হারিয়ে দিতে পারে তাহলে ধরে নিতে হবে জগতের যতো দর্শন অাছে সবাইকে সে হারিয়ে দিয়েছে; যেমন ধরুন কলকাতার সবথেকে বড় মল্লবীরকে যদি চেন্নাইয়ের কোন মল্লবীর হারিয়ে দেয় তাহলে সে কলকাতার সব মল্লবীরকে হারিয়ে দিয়েছে সেটা মানতে হবে ৷

কর্মমীমাংসকদের হারাতে গিয়ে জ্ঞানবাদী শঙ্করাচার্যকে খুব কঠিন কঠিন শক্তির মুখোমুখি হতে হয়েছিল। প্রথমে তিনি খোজ নিলেন মীমাংসকদের প্রধান কে? খোজ নিয়ে জানলেন যে তাদের প্রধান হলেন কুমারিল ভট্ট । এক ব্রাহ্মণের কাছে তিনি কুমারিল ভট্টের জীবনকথা বিস্তারিত শুনলেন ৷ কুমারিলের অপূর্ব জীবনকথা শুনে শঙ্করাচার্য মুগ্ধ হয়ে শিষ্যসহ কুমারিলের উদ্দেশ্যে যাত্রা শুরু করলেন ৷ কুমারিল ভট্টকে যখন শঙ্করাচার্য খুজে পেলে তখন কুমারিল ভট্ট একটা প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য তুষের অাগুনে নিজেকে অাত্মাহুতি দিয়ে মৃত্যুর অপেক্ষা করছেন । কুমারিল ভট্ট বৌদ্ধ ধর্মকে জানার জন্য নিজের ধর্ম ত্যাগ করে বৌদ্ধ ধর্ম গ্রহণ করেছিলেন । বৌদ্ধ ধর্মকে ভালো করে জেনে বুঝে, এদের দূর্বলতা ও দোষ ক্রুটিকে অায়ত্ত করে নিয়ে পরে তিনি বৌদ্ধ ধর্মকে অাক্রমণ করলেন, অার এমন ভাবে অাক্রমণ করলেন যে সারা ভারতে বৌদ্ধধর্মকে একেবারে নস্যাৎ করে ছেড়ে দিলেন । কিন্তু নিজের ধর্মকে ছেড়ে যেহেতু বিধর্মী হয়েছিলেন সেই পাপের প্রায়শ্চিত্ত করার জন্য তিনি নিজেকে তুষাগ্নিতে অাহুতি দিয়ে তিল তিল করে পুড়তে থাকেন, অার মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করেন । ঐ সময় শঙ্করাচার্য তাঁকে গিয়ে বললেন, “অামি অাপনার অতুলনীয় পান্ডিত্যশক্তির কথা শুনে আপনার কাছে এসেছি। আমি ব্রহ্মসূত্রের অদ্বৈতমতের পোষক ভাষ্য রচনা করেছি ৷ ইচ্ছা ছিল যদি আপনি আমার এই মতবাদ গ্রহণ করেন এবং ইহার ওপর একটি বার্ত্তিক রচনা করে দেন তবে এই অদ্বৈতমত নির্দোষভাবে জগতে প্রতারিত হতো ৷”
কুমারিল ভট্ট শঙ্করাচার্যকে তখন বলেন, “অামারতো এই অবস্থা দেখছো, অামি তো এখনো পুড়ছি তোমার সঙ্গে কি অার বাদ-বিচার করবো! তবে মিথিলাতে অামার পরম শিষ্য মণ্ডন মিশ্র অাছে, তুমি ওকে গিয়ে বিতর্কে যদি হারাতে পারো ও তোমার মত যদি সে গ্রহণ করে তবে তা আমিও গ্রহণ করেছি বলে বুঝে নিবে ৷”

শঙ্করাচার্য কুমারিল ভট্টের মৃত্যু অবধি সেখানেই অপেক্ষা করলেন, এবং মৃত্যুর পর ক্রিয়াকর্মাদি করে মিথিলাতে গিয়ে মণ্ডন মিশ্রকে সরাসরি তর্কে অাহ্বান জানালেন। সাত দিন ধরে এই তর্ক চলছিল এবং সাতদিন পর মণ্ডন মিশ্র শঙ্করাচার্যের মতের সহিত আপোষ করেন ও তাঁর শিষ্যত্ব গ্রহণ করেন । পরবর্তী কালে শঙ্করাচার্যের প্রধান চার শিষ্যের মধ্যে মণ্ডন মিশ্র একজন হয়ে উঠলেন। অার তাঁর নাম হয় সুরেশ্বরাচার্য। মণ্ডন মিশ্রকে যেদিন শঙ্করাচার্য অবনত করলেন সেদিন থেকে ভারতবর্ষের প্রধান দর্শন হয়ে গেলো বেদান্ত । শঙ্করাচার্যের পর প্রায় তেরশো বছর ভারতের উপর দিয়ে অতিবাহিত হয়ে গিয়েছে কিন্তু কেউ এখনো পর্যন্ত বেদান্তকে হারাতে পারেনি । বেদান্তের অনেক শাখা প্রশাখা অাছে- দ্বৈতবাদ, অদ্বৈতবাদ, বিশিষ্ট্যদ্বৈতবাদ, অচিন্ত্যভেদাভেদভাদ ইত্যাদি অার এদের মধ্যে প্রচন্ড বাকবিতণ্ডা লেগে থাকে, কিন্তু অন্য দর্শন বা অন্য ধর্ম অাক্রমণ করলে এরা সবাই এক জোট হয়ে পাল্টা অাক্রমণ করে।

(শঙ্করাচার্য ও মন্ডন মিশ্র)


                         Related post : কুমারিল ভট্টের জীবনী


সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭

শঙ্করাচার্য কি শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানতেন?


নব্য আর্যসমাজীদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে আদি শঙ্করাচার্য নাকি অবতারবাদ মানতেন না এবং শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণুর অবতার ও স্বয়ং ভগবান বলে মানতেন না। হতে পারে আর্যসমাজীরা কেবল হিন্দুদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও ভুল পথে চালিত করার জন্য এইরকম ভ্রান্ত অপপ্রচার করে থাকে। যাই হোক, বর্তমান হিন্দু যুবসমাজ যাতে এইরকম ভুল ধারণার বশবর্তী না হয় তার জন্য আর্য সমাজীদের এই ভ্রান্ত ধারণার নিরসন হওয়া দরকার।

জগদগুরু আদি শঙ্করাচার্য তাঁর লেখা গীতাভাষ্যের উপক্রমণিকাতেই স্বীকার করেছেন যে শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার ছিলেন ও সাক্ষাৎ ভগবান ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘.....দীর্ঘেণ কালেন অনুষ্ঠাতৃণাং কামোদ্ভবাদ হীয়মানবিবেকবিজ্ঞানহেতুকেন অধর্মেণ অভিভূয়মানে ধর্মে প্রবর্ধমানে চ অধর্মে, জগতঃ স্থিতিং পরিপিপালয়িষুঃ স আদিকর্তা নারায়ণাখ্যো বিষ্ণুঃ ভৌমস্য ব্রহ্মণো ব্রাহ্মণত্বস্য রক্ষণার্থং দেবক্যাং বসুদেবাদ্ অংশেন কৃষ্ণ কিল সম্বভূব।’
অর্থাৎঃ  বহুকাল পরে যখন ধর্মানুষ্ঠানকারীদের অন্তঃকরণে কামনার বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ও বিবেকবিজ্ঞানের হ্রাস হওয়ার কারণে উৎপন্ন অধর্মের দ্বারা ধর্ম ক্ষীণ হতে লাগল তখন জগতের স্থিতি রক্ষা করার জন্য আদিকর্তা নারায়ণনামক শ্রীবিষ্ণুভগবান ভূলোকের ব্রহ্মের অর্থাৎ ভূদেব(ব্রাহ্মণদের) ব্রাহ্মণত্ব রক্ষা করার জন্য শ্রীবসুদেব দ্বারা দেবকীর গর্ভে নিজের অংশে (লীলাবিগ্রহদ্বারা) শ্রীকৃষ্ণরূপে প্রকট হলেন।

তিনি আরো লিখেছেন ‘স চ ভগবান্ জ্ঞানৈশ্বর্যশক্তিবলবীর্যতেজোভিঃ সদা সম্পন্নঃ ত্রিগুণাত্মিকা বৈষ্ণবীং স্বাং মায়াং মূলপ্রকৃতিং বশীকৃত্য অজঃ অব্যয়ো ভূতানাম্ ঈশ্বরো নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্ত­স্বভাবঃ অপি সন্ স্বমায়য়া দেহবান্ ইব জাত ইব চ লোকানুগ্রহং কুর্বন্ ইব লক্ষ্যতে।’
অর্থাৎঃ  জ্ঞান, ঐশ্বর্য, শক্তি, বল, বীর্য আর তেজ আদি সম্পন্ন সেই ভগবান যদিও অজ, অবিনাশী, সকল ভূতের ঈশ্বর ও নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত স্বভাব বিশিষ্ট হন, কিন্তু তিনি নিজের ত্রিগুণাত্মিকা মূল প্রকৃতি বৈষ্ণবী মায়াকে বশীভূত করে নিজের লীলাদ্বারা শরীর ধারণ করেন বলে ও লোকানুগ্রহ করে থাকেন বলে প্রতিভাত হতে থাকেন। (অর্থাৎ পরমার্থতঃ সাধারণ মনুষ্যের ন্যায় দেহধারণ করেন না)



গীতা ৯/১১ এর ভাষ্যে শঙ্করাচার্য বলেছেন, ‘মূঢ়গণ ভগবানের নিত্যমুক্ত নিত্যবুদ্ধ সত্তার কথা জানেনা এবং তিনিই যে সর্বভূত মহেশ্বর একথা তারা জানে না, পরন্তু তিনি যখন লোক সম্বন্ধিনী মনুষ্যতনু আশ্রয় করেন তখন তাঁকে শুধুমাত্র মানুষ মনে করে অবজ্ঞা করে, এবং পরমাত্মাতত্ত্ব অপেক্ষাও অন্তরতম সেই তত্ত্বকে অবজ্ঞা করার জন্য বারংবার সংসারে অকিঞ্চন ও শোচনীয় দশায় পতিত হয় ৷’


সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ