শাস্ত্রশিরোমণি শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে শ্রীকৃষ্ণের যে-কয়েকজন স্ত্রীর নাম উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁরা হচ্ছেন— রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, কালিন্দী, ভদ্রা, সত্যা (নাগ্নজিতী), মিত্রাবিন্দা, লক্ষণা ও রোহিণী ৷ এছাড়াও তিনি ষোড়শসহস্র রাজকন্যাকে উদ্ধারপূর্বক স্ত্রীরুপে গ্রহণ করেছিলেন ৷
শ্রীকৃষ্ণ যে এত বিবাহ করলেন তার দুইটি কারণ—একটি রাজনৈতিক, অপরটি আধ্যাত্মিক ৷ তখন বিরাট ভারতে সামন্তরাজা রাজত্ব করতেন ৷ তাঁরা সর্বদাই বিবাদবিসংবাদে রত থাকতেন ৷ ফলে দেশের অখণ্ডতা নষ্টপ্রায় হয়েছিল ৷ শ্রীকৃষ্ণ এই রাজ্যের অখণ্ডতা সাধন ব্রতরুপে গ্রহণ করেছিলেন ৷ যারা অতীব দুর্দ্দান্ত, যেমন-জরাসন্ধ, শিশুপাল—তাদেরকে তিনি শেষ করার ব্যবস্থা করেন ৷ যারা অপেক্ষাকৃত শান্ত, তাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সকলকে একতাসূত্রে বন্ধনের চেষ্টা করেন ৷ রুক্মিণী বিদর্ভরাজকন্যা, নাগ্নজিতী কোশলরাজকন্যা, ভদ্রা কেকয়রাজকন্যা, লক্ষণা মদ্ররাজকন্যা—এদেরকে বিবাহ করে তিনি একটি প্রীতির সূত্র রচনা করেন ৷ ইহা রাজনৈতিক হেতু ৷
আর আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে, নিখিল বিশ্বে শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র স্বামী ৷ জীবমাত্রই প্রকৃতি ৷ শ্রীকৃষ্ণ সকল জীবেরই পরম স্বামী ৷ তিনি সকলকে আপন বলে গ্রহণ করতে সর্বদা উৎসুক ৷ কিন্তু জীব তাঁকে ভুলে আছে বলে তিনি গ্রহণ করতে পারেন না ৷ যদি কোন ভাগ্যে কাহারও শ্রীকৃষ্ণে ভালোবাসা জাগ্রত হয়— শ্রীকৃষ্ণ তখন কালবিলম্ব না করে তাকে আপন জন করে নেন, কোন বাধাই মানেন না ৷ রুক্মিণী, কালিন্দী, মিত্রাবন্দা, নাগ্নজিতী, ভদ্রা, লক্ষণা— সকলেই অন্তরে শ্রীকৃষ্ণকে পতিরুপে কামনা করেছিলেন ৷ এমতবস্থায় সকল বাধা অতিক্রম করে তাঁদেরকে গ্রহণ করাই তাঁর ব্রত ৷ জাম্ববতী ও সত্যভামার পিতা নিজেদের অপরাধী মনে করে ক্ষমা পাওয়ার আশায় শ্রীকৃষ্ণকে নিজ নিজ কন্যা অর্পণ করেন বলে শ্রীকৃষ্ণও তাঁদেরকে গ্রহণ করতে বাধ্য হন ৷
নরকাসুর নামে এক অত্যাচারী রাজা ছিল ৷ তিনি বহু রাজকন্যা অপহরণ করে বন্দী করে রেখেছিল ৷ শ্রীকৃষ্ণ তাকে বধ করেন এবং তার ভবনে প্রবেশ করে বন্দী ষোড়শসহস্র রাজকন্যাকে উদ্ধার করেন ৷
“ঐ সকল রাজকন্যা শ্রীকৃষ্ণকে গৃহমধ্যে প্রবিষ্ট হতে দেখেই মোহিতা হয়ে পড়েছিল এবং সেই নরশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণকে মনে মনে দৈবকৃত উপস্থাপিত অভীষ্ট পতি বলে বরণ করেছিল ৷ তাঁরা সকলে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইনি যেন আমার পতি হন, বিধাতা তার অনুমোদন করুন’ এইরুপ চিন্তা করে অনুরাগভরে ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণে চিত্ত সমাহিত করেছিল” (শ্রীমদ্ভাগবত ১০৷৫৯৷৩৩-৩৪) ৷
এই হেতু শ্রীকৃষ্ণও তাঁদেরকে পত্নীত্বে বরণ করে তাঁদের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ৷ শ্রীকৃষ্ণকে পতিরুপে কামনা করে নাই, এমন কাউকেও তিনি পত্নীরুপে গ্রহণ করেন নাই; জগৎপতির ইহাই কর্তব্য ৷ এই কার্য্যের অনুকরণ কেউই করতে পারেন না ৷ কারণ শ্রীকৃষ্ণ ষোড়শসহস্র গৃহে ষোড়শসহস্র মূর্তি ধারণ করে তাঁদেরকে বিবাহ করেছিলেন ও একই সময়ে প্রত্যেকের গৃহে অবস্থিত থেকে তাঁদের প্রীতি বিধান করিতেন ৷ প্রমাণস্বরূপ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০৷৫৯৷৪২)-
অথো মুহূর্ত একস্মিন্ নানাগারেষু তাঃ স্ত্রীয়ঃ ৷
যথোপয়েমে ভগবান তাবদ্রূপধরোহ’ব্যয়ঃ ৷৷
—‘যিনি সকল অবস্থায় পরিপূর্ণ সেই ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরের অন্তঃপুর হতে যত রাজকন্যা আনয়ন করেছিলেন, তত রূপ ধারণ করে নানা গৃহে একই শুভলগ্নে তাঁদেরকে বিধি অনুসারে বিবাহ করেন ৷’
ষোড়শসহস্র শরীর ধারণরুপ অদ্ভূত কায়বূহ্য বিস্তার করার সামর্থ্য নিখিল বিশ্বে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন আর কারো নাই ৷
আরেকটি কথা, লোকমুখে প্রচলিত আছে যে ‘কৃষ্ণ কেমন?—যে যেমন’ অর্থাৎ যে যেমন ধরনের লোক, সে কৃষ্ণকেও ঠিক তেমনই মনে করে ৷ এই কারণেই চরিত্রহীন ব্যক্তিরা মন্তব্য করে যে, কৃষ্ণের এত বিবাহের একমাত্র কারণ তাঁর অতিরিক্ত কামুকতা ৷ কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যে কামুক পুরুষ ছিলেন না তার একটি ছোট্ট প্রমাণ দিলাম, বুদ্ধিমানেরা বুঝে নিবেন ৷
‘কৃষ্ণপ্রিয়াগণ সংখ্যায় ষোড়শ সহস্র ছিলেন; তথাপি তাঁহারা কামশরের দ্বারা এবং কামশাস্ত্রোক্ত অন্যান্য উপায়সমূহের দ্বারাও ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের মন বিক্ষোভিত করিতে সমর্থা হন নাই ৷’ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৬১/৪)
khub sundor dada
উত্তরমুছুনধন্যবাদ.....😍
উত্তরমুছুন৫১০০ বছর আগে শ্রীকৃষ্ণের সময়। তখন ভারতবর্ষের জনসংখ্যা কত ছিল? ৬০০০ বছর আগে ভারতের জনসংখ্যা ১০ লক্ষ। ৪০০০ বছর আগে ভারতের জনসংখ্যা ছিল ৪০ থেকে ৬০ লক্ষ। বর্তমানে আমাদের রাজধানী ঢাকার জনসংখ্যা ২ কোটির কাছাকাছি। কৃষ্ণ এত মেয়ে পেল কোথায়? আর কৃষ্ণ একাই যদি ১৬০০০ এর বেশী মেয়ে বিয়ে করে অন্যান্যদের কি অবস্থা?
উত্তরমুছুনস্বয়ং ইশ্বর মানুষের বেশ ধরে দুনিয়ায় এসেছেন যৌনতার জন্য? তাহলে ইশ্বরের মর্যাদা কি থাকে? মানুষ কেন এমন ইশ্বর পুজিত করবে যে ইশ্বর কামুক, যে ইশ্বর নিজে নিজেকে অপমানিত করে।
আধ্যাত্মিকতার বুলি উড়ায়? আধ্যাত্মিকতা কি? আধ্যাত্মিকতার বৈশিষ্ট্য কি? কোন স্তরকে আধ্যাত্মিকতা বলে? জবাব দেওয়ার কেহ আছে?
কৃষ্ণ চরিত্রটি কাল্পনিক। কেন কাল্পনিক তার প্রমান দেওয়া সহজ।
মূর্খ কোথাকার
মুছুনপুরাণের দৃষ্টিতে দেখলে সব চরিত্রই কাল্পনিক।কিন্তু মহাভারত তো প্রাচীন ভারতের ইতিহাস।কৃষ্ণের অস্তিত্ব থাকার বড় কারণ সেই নিমজ্জ্বিত শহর দ্বারকা
মুছুনএভাবেই কৃষ্ণচরিত্রের ১৪ গুষ্টি উদ্ধার করতে থাকো😑😑
উত্তরমুছুন