বুধবার, ২৭ ফেব্রুয়ারী, ২০১৯

মহাত্মা শুকদেব কতৃক ভাগবত পুরাণ বর্ণন বিষয়ক শঙ্কা নিবারণ


মহাভারত হতে দেখা যায়, পরীক্ষিতের জন্মের বহুকাল পূর্বেই ব্যাসপুত্র শুকদেব অন্তর্ধান করেন ৷ তাহলে পরীক্ষিতের মৃত্যুর সময়ে শুকদেব এসে তাঁকে ভাগবত শোনালেন কিভাবে?

এ বিষয়ে অনুসন্ধান করতে গেলে, মহাভারতে পাই -
অন্তর্হিতঃ প্রভাবং তু দর্শয়িত্বা শুকস্তদা ৷
গুণান্ সন্ত্যজ্য শব্দাদীন্ পদমভ্যগমৎ পরম্ ৷৷
অর্থঃ— ‘শুকদেব নিজের যোগপ্রভাব দেখাইয়া অন্তর্হিত হইলেন এবং শব্দস্পর্শ প্রভৃতি বিষয় পরিত্যাগ করিয়া, পরমপদ লাভ করিলেন ৷’ (শান্তিপর্ব ৩১৯/৫৬, অনুবাদক—শ্রীহরিদাস সিদ্ধান্তবাগীশ ভট্টাচার্য্য)

পরমপদ লাভ করা অর্থ মুক্তিলাভ করা ৷ বেদান্তদর্শন (৪/৪/৮)-এ বলা হয়েছে, ‘সঙ্কল্পাদেব তচ্ছ্রুতেঃ’—মুক্তজীব যখন যা সংকল্প করেন সংকল্পমাত্রই তা সিদ্ধ হয় ৷ এ বিষয়ে শ্রুতিই প্রমাণ ৷ যেমন- ছান্দোগ্যপোনিষদে (৮/২ খন্ডে) বলা হয়েছে যে, তাঁদের এমনই মহিমা যে ইচ্ছামাত্রই পিতা-মাতা-ভাই-বোন-বন্ধুদের সাথে মিলিত হতে পারেন, যদি অন্ন-পানীয় ভোগের ইচ্ছা করেন তা তৎক্ষণাৎ তাঁদের সম্মুখে উপস্থিত হয়.. ইত্যাদি ৷ আরো বলা হয়েছে যে, ‘দ্বাদশাহবদুভয়বিধং বাদরায়ণোহ’তঃ’—মুক্তজীব সত্যসংকল্পবিশিষ্ট অর্থাৎ যখন যা সংকল্প করেন সংকল্পমাত্রই তা সিদ্ধ হওয়ায় তাঁদের অশরীর অবস্থায় থাকা বা শরীর ধারণ করা উভয়ই সম্ভব, ইহা মহর্ষি বাদরায়ণ ব্যাসদেবের সিদ্ধান্ত (বেদান্তদর্শন ৪/৪/১২) ৷ মুক্তজীব এইরুপ প্রভাবযুক্ত হলে, শুকদেবের পক্ষে পরীক্ষীতের সভায় এসে ভাগবত বর্ণনা করা কি অসম্ভব কিছু ?
কিন্তু আপত্তি হতে পারে যে, মুক্ত পুরুষ শুকদেব কোন দুঃখে মর্ত্যলোকে এসে ভাগবত বর্ণনা করতে যাবেন? সেই উত্তর শুকদেব নিজেই দিয়েছেন, শুকদেব রাজা পরিক্ষীতকে বলিতেছেন:—
“হে রাজন্! যে সকল মুনি বিধি নিষেধ হইতে নিবৃত্ত হইয়া নির্গুণ ব্রহ্মে অবস্থিত, তাঁহারাও হরির গুণানুকীর্ত্তনে আমোদ করিয়া থাকেন ৷ মহারাজ! আমি আপনার নিকট যে পুরাণ কহিতেছি, ইহা ভগবানের কথিত, ইহার নাম ভাগবত ৷ এ অতি প্রধান পুরাণ, সর্ব্ব বেদের তুল্য, অতএব ইহা অতি অপূর্ব্ব ৷ দ্বাপর যুগের শেষে কলিতে পিতা কৃষ্ণদ্বৈপায়নের নিকট আমি এই শাস্ত্র অধ্যয়ন করি ৷ হে রাজন্! আমি নির্গুণ ব্রহ্মে অবস্থিত ছিলাম সত্য, কিন্তু উত্তমঃশ্লোক ভগবানের লীলা আমার চিত্তকে আকর্ষণ করিয়াছিল, তাহাতেই আমার এই আখ্যান অধ্যয়ন করা হয় ৷ আপনি ভগবানের পরমভক্ত, তাই আপনার নিকট আমি এই শাস্ত্র ব্যাখ্যা করিতেছি ৷  ইহাতে যে ব্যক্তি শ্রদ্ধা করে, ভগবান্ মুকুন্দে তাহার নির্ম্মলা মতি হয় ৷” (শ্রীমদ্ভাগবত ২/১/৭-১০, অনুবাদক—শ্রীরামনারায়ণ বিদ্যারত্ন)
অতএব, শুকদেব স্বয়ং মু্ক্তপুরুষ হওয়া সত্ত্বেও মর্ত্যলোকে এসে ভাগবত বর্ণনা করার কারণ নিম্নরুপ—
প্রথমতঃ, মুক্তজীবেরাও শ্রীহরির লীলাকথা শ্রবণ-বর্ণনে পরমানন্দ লাভ করে থাকেন, তাই মুক্তপুরুষ শুকদেব স্বপ্রণোদিত হয়েই হরির লীলাকথায় পূর্ণ ‘ভাগবত’ আলোচনা করতে পরীক্ষিতের সভায় আসেন ৷
দ্বিতীয়ত,  ভাগবত পুরাণ সর্ববেদের তুল্য, এই গ্রন্থে যে শ্রদ্ধা করে তার শ্রীহরিতে চিত্ত নিবিষ্ট হয় ৷ তাই মানব যাতে শ্রীহরির প্রতি উন্মুখ হয় সেই হিতসাধনের জন্যই শুকদেব ভাগবত প্রচার করতে আসেন৷


রাজা পরীক্ষিত শুকদেবকে বলেছেন—
‘আপনার গতি অব্যক্ত, মানুষে কি আপনার দর্শন পাইতে পারে? বিশেষতঃ আমরা ম্রিয়মাণ, আমাদের পক্ষে দর্শন লাভ কোন মতেই সম্ভাবিত ছিলনা, বোধহয় শ্রীকৃষ্ণের কৃপাতেই সম্পন্ন হইল ৷’ (শ্রীমদ্ভাগবত ১/১৯/৩৩, অনুবাদক—শ্রীরামনারায়ণ বিদ্যারত্ন)

..........
প্রশ্নঃ কিন্তু যখন শুকদেব পরীক্ষিতের সভায় আসেন তখন শুকদেবের বয়স মাত্র ১৬ বছর থাকে কিভাবে? (ভাঃ ১/১৯/২৪)
উত্তরঃ আপনি কি মনে করেন যে মুক্তি লাভের পরও মুক্তজীবের বয়োঃবৃদ্ধি হতে থাকে?
.........


//ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু//

২টি মন্তব্য:

  1. ভাগবত ১/১৯/৩৩- কেবল আপনাকে স্মরণ করে আমাদের ঘরগুলি ততক্ষণাৎ পবিত্র হয়ে যায়। এবং আপনাকে দেখার, আপনাকে স্পর্শ করার, আপনার পবিত্র চরণ ধৌত করার বিষয়ে আর কি বলার আছে ।
    আর কত চালাকি করবেন ধূর্ত বৈষ্ণব বাবাজীগণ

    উত্তরমুছুন
  2. খুব ভালো একটা জ্ঞাতব্য বিষয়

    উত্তরমুছুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ