শনিবার, ২৪ নভেম্বর, ২০১৮

শিব কতৃক ভগবান শ্রীকৃষ্ণের স্তব


শ্রীরূদ্র উবাচ
ত্বং হি ব্রহ্ম পরং জ্যোতির্গূঢ়ং ব্রহ্মণি বাঙ্ময়ে ৷
যং পশ্যন্তমলাত্মান আকাশমিব কেবলম্ ৷৷
(শ্রীমদ্ভাগবদ মহাপুরাণ ১০৷৬৩৷৩৪)
—“[হে পরমেশ্বর শ্রীকৃষ্ণ!] বেদে দুর্বোধ্য শব্দের দ্বারা যাঁর বর্ণনা করা হয়েছে, যিনি জ্যোতিস্বরুপ এবং আকাশের ন্যায় সকল দোষ হতে অস্পৃষ্ট ও স্বাশ্রয়, তুমিই সেই পরমব্রহ্ম ৷ শুদ্ধচিত্ত সাধকগণ তোমাকে দর্শন করেন ৷”

দেবদত্তমিমং লব্ধা নৃলোকমজিতেন্দ্রিয়ঃ ৷
যো নাদ্রিয়েত ত্বৎপাদৌ স শোচ্যো হ্যাত্মবঞ্চকঃ ৷৷
(শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ১০৷৬৩৷৪১)
—“[হে ভগবান!] যে অজিতেন্দ্রিয় ব্যক্তি তোমার দেওয়া এই মনুষ্যদেহ লাভ করে তোমার চরণযুগল সমাদরে সেবা না করে, সে আত্মবঞ্চক ও অনুশোচনার পাত্র ৷”

অহং ব্রহ্মাথ বিবুধা মুনয়শ্চামলাশয়াঃ ৷
সর্বাত্মনা প্রপন্নাস্ত্বামাত্মানং শ্রেষ্ঠমীশ্বরম্ ৷৷
তং ত্বা জগৎস্থিত্যুদয়ান্তহেতুং
         সমং প্রশান্তং সুহৃদাত্মদৈবম্ ৷
অনন্যমেকং জগদাত্মকেতুং
          ভবাপবর্গায় ভজাম দেবম্ ৷৷
(শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ১০৷৬৩৷৪৩-৪৪)
—“[হে ভগবান!] আমি (শিব), ব্রহ্মা, দেবগণ ও শুদ্ধচিত্ত মুনিগণ সর্বোতভাবে প্রিয়তম পরমাত্মা ঈশ্বর তোমার শরণাগত হই ৷ হে দেব! তুমি জগতের সৃষ্টি স্থিতি প্রলয়ের হেতু, সম স্বভাব অতএব প্রশান্তস্বরুপ, সুহৃৎ, সমানাধিকশূণ্য ও জগদাত্মার আধার ৷ হে আরাধ্যদেব,  আমরা তোমাকে সংসার মুক্তির জন্য ভজনা করি ৷”
______________________

সত্ত্বে চ তস্মিন্ ভগবান্ বাসুদেবো
হ্যধোক্ষজো মে নমসা বিধীয়তে ৷৷
(শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ৪৷৩৷২৪)
মহাদেব সতীদেবীর নিকট বলিতেছেন—“সেই শুদ্ধ চিত্তের অন্তর্বাসী ভগবান বাসুদেবকেই আমি প্রণামাদি নিবেদন করি ৷”

রুদ্র উবাচ
যঃ পরঃ রহসঃ সাক্ষাৎ ত্রিগুণাজ্জীবসংজ্ঞিতৎ।
ভগবদন্তং বাসুদেবং প্রপন্নঃ স প্রিয়ো হি মে।।
(শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণ ৪৷২৪৷২৮)
 শ্রীরূদ্রদেব বলিলেন, “যে ব্যক্তি প্রকৃতি ও পুরূষের নিয়ন্তা গুহ্যাদপি গুহ্যস্বরূপ ভগবান বাসুদেবের শ্রীচরণে অনন্যভাবে শরণাগত হন তিনিই আমার প্রিয় ৷”

যৎপাদপঙ্কজরজঃ শিরসা বিভর্ত্তি -
শ্রীরজজঃ সগিরিশঃ সহ লৌকপালৈঃ ৷
(শ্রীমদ্ভাগবদ মহাপুরাণ ১০৷৫৮৷৩৮)
অর্থ— লক্ষীদেবী, মহাদেব ও ব্রহ্মা সহ সকল লোকপাল দেবতাগণ শ্রীকৃষ্ণের শ্রীচরণকমলের রেণু মস্তকে ধারণ করে থাকেন ৷

//ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু//


বুধবার, ২১ নভেম্বর, ২০১৮

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বহুবিবাহ করেন কেন?




শাস্ত্রশিরোমণি শ্রীমদ্ভাগবত মহাপুরাণে শ্রীকৃষ্ণের যে-কয়েকজন স্ত্রীর নাম উল্লেখ পাওয়া যায় তাঁরা হচ্ছেন— রুক্মিণী, সত্যভামা, জাম্ববতী, কালিন্দী, ভদ্রা, সত্যা (নাগ্নজিতী), মিত্রাবিন্দা, লক্ষণা ও রোহিণী ৷ এছাড়াও তিনি ষোড়শসহস্র রাজকন্যাকে উদ্ধারপূর্বক স্ত্রীরুপে গ্রহণ করেছিলেন ৷
শ্রীকৃষ্ণ যে এত বিবাহ করলেন তার দুইটি কারণ—একটি রাজনৈতিক, অপরটি আধ্যাত্মিক ৷ তখন বিরাট ভারতে সামন্তরাজা রাজত্ব করতেন ৷ তাঁরা সর্বদাই বিবাদবিসংবাদে রত থাকতেন ৷ ফলে দেশের অখণ্ডতা নষ্টপ্রায় হয়েছিল ৷ শ্রীকৃষ্ণ এই রাজ্যের অখণ্ডতা সাধন ব্রতরুপে গ্রহণ করেছিলেন ৷ যারা অতীব দুর্দ্দান্ত, যেমন-জরাসন্ধ, শিশুপাল—তাদেরকে  তিনি শেষ করার ব্যবস্থা করেন ৷ যারা অপেক্ষাকৃত শান্ত, তাদের সঙ্গে বিবাহ বন্ধনে আবদ্ধ হয়ে সকলকে একতাসূত্রে বন্ধনের চেষ্টা করেন ৷ রুক্মিণী বিদর্ভরাজকন্যা, নাগ্নজিতী কোশলরাজকন্যা, ভদ্রা কেকয়রাজকন্যা, লক্ষণা মদ্ররাজকন্যা—এদেরকে বিবাহ করে তিনি একটি প্রীতির সূত্র রচনা করেন ৷ ইহা রাজনৈতিক হেতু ৷
আর আধ্যাত্মিক দৃষ্টিতে, নিখিল বিশ্বে শ্রীকৃষ্ণই একমাত্র স্বামী ৷ জীবমাত্রই প্রকৃতি ৷ শ্রীকৃষ্ণ সকল জীবেরই পরম স্বামী ৷ তিনি সকলকে আপন বলে গ্রহণ করতে সর্বদা উৎসুক ৷ কিন্তু জীব তাঁকে ভুলে আছে বলে তিনি গ্রহণ করতে পারেন না ৷ যদি কোন ভাগ্যে কাহারও শ্রীকৃষ্ণে ভালোবাসা জাগ্রত হয়— শ্রীকৃষ্ণ তখন কালবিলম্ব না করে তাকে আপন জন করে নেন, কোন বাধাই মানেন না ৷ রুক্মিণী, কালিন্দী, মিত্রাবন্দা, নাগ্নজিতী, ভদ্রা, লক্ষণা— সকলেই অন্তরে শ্রীকৃষ্ণকে পতিরুপে কামনা করেছিলেন ৷ এমতবস্থায় সকল বাধা অতিক্রম করে তাঁদেরকে গ্রহণ করাই তাঁর ব্রত ৷ জাম্ববতী ও সত্যভামার পিতা নিজেদের অপরাধী মনে করে ক্ষমা পাওয়ার আশায় শ্রীকৃষ্ণকে নিজ নিজ কন্যা অর্পণ করেন বলে শ্রীকৃষ্ণও তাঁদেরকে গ্রহণ করতে বাধ্য হন ৷
নরকাসুর নামে এক অত্যাচারী রাজা ছিল ৷ তিনি বহু রাজকন্যা অপহরণ করে বন্দী করে রেখেছিল ৷ শ্রীকৃষ্ণ তাকে বধ করেন এবং তার ভবনে প্রবেশ করে বন্দী ষোড়শসহস্র রাজকন্যাকে উদ্ধার করেন ৷
“ঐ সকল রাজকন্যা শ্রীকৃষ্ণকে গৃহমধ্যে প্রবিষ্ট হতে দেখেই মোহিতা হয়ে পড়েছিল এবং সেই নরশ্রেষ্ঠ শ্রীকৃষ্ণকে মনে মনে দৈবকৃত উপস্থাপিত অভীষ্ট পতি বলে বরণ করেছিল ৷ তাঁরা সকলে পৃথক পৃথক ভাবে ‘ইনি যেন আমার পতি হন, বিধাতা তার অনুমোদন করুন’ এইরুপ চিন্তা করে অনুরাগভরে ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণে চিত্ত সমাহিত করেছিল” (শ্রীমদ্ভাগবত ১০৷৫৯৷৩৩-৩৪) ৷
এই হেতু শ্রীকৃষ্ণও তাঁদেরকে পত্নীত্বে বরণ করে তাঁদের প্রতি অনুগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন ৷ শ্রীকৃষ্ণকে পতিরুপে কামনা করে নাই, এমন কাউকেও তিনি পত্নীরুপে গ্রহণ করেন নাই; জগৎপতির ইহাই কর্তব্য ৷ এই কার্য্যের অনুকরণ কেউই করতে পারেন না ৷ কারণ শ্রীকৃষ্ণ ষোড়শসহস্র গৃহে ষোড়শসহস্র মূর্তি ধারণ করে তাঁদেরকে বিবাহ করেছিলেন ও একই সময়ে প্রত্যেকের গৃহে অবস্থিত থেকে তাঁদের প্রীতি বিধান করিতেন ৷ প্রমাণস্বরূপ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০৷৫৯৷৪২)-
অথো মুহূর্ত একস্মিন্ নানাগারেষু তাঃ স্ত্রীয়ঃ ৷
যথোপয়েমে ভগবান তাবদ্রূপধরোহ’ব্যয়ঃ ৷৷
—‘যিনি সকল অবস্থায় পরিপূর্ণ সেই ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণ নরকাসুরের অন্তঃপুর হতে যত রাজকন্যা আনয়ন করেছিলেন, তত রূপ ধারণ করে নানা গৃহে একই শুভলগ্নে তাঁদেরকে বিধি অনুসারে বিবাহ করেন ৷’
ষোড়শসহস্র শরীর ধারণরুপ অদ্ভূত কায়বূহ্য বিস্তার করার সামর্থ্য নিখিল বিশ্বে যোগেশ্বর ভগবান শ্রীকৃষ্ণ ভিন্ন আর কারো নাই ৷

আরেকটি কথা, লোকমুখে প্রচলিত আছে যে ‘কৃষ্ণ কেমন?—যে যেমন’ অর্থাৎ যে যেমন ধরনের লোক, সে কৃষ্ণকেও ঠিক তেমনই মনে করে ৷ এই কারণেই চরিত্রহীন ব্যক্তিরা মন্তব্য করে যে, কৃষ্ণের এত বিবাহের একমাত্র কারণ তাঁর অতিরিক্ত কামুকতা ৷ কিন্তু শ্রীকৃষ্ণ যে কামুক পুরুষ ছিলেন না তার একটি ছোট্ট প্রমাণ দিলাম, বুদ্ধিমানেরা বুঝে নিবেন ৷

‘কৃষ্ণপ্রিয়াগণ সংখ্যায় ষোড়শ সহস্র ছিলেন; তথাপি তাঁহারা কামশরের দ্বারা এবং কামশাস্ত্রোক্ত অন্যান্য উপায়সমূহের দ্বারাও ভগবান্ শ্রীকৃষ্ণের মন বিক্ষোভিত করিতে সমর্থা হন নাই ৷’ (শ্রীমদ্ভাগবত ১০/৬১/৪)

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ