শনিবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০১৭

ভগবান শ্রীকৃষ্ণ কি গীতা বিস্মৃত হন?



কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধকালে ভগবান শ্রীকৃষ্ণ অর্জুনের নিকট যে গীতামৃত কীর্ত্তণ করেছিলেন, সেই পবিত্র গীতাজ্ঞান অর্জুন ভুলে গিয়ে অশ্বমেধপর্বে শ্রীকৃষ্ণের নিকট পুণরায় শুনতে চান । তখন ভগবান শ্রীকৃষ বলেন, “তুমি নিশ্চয় দুর্ম্মেধা, তাই আমার সেই সকল কথা স্মরণ রাখিতে পার নাই ৷” তিনি আরও বলিলেন—
পরম হি ব্রহ্ম কথিতং যোগযুক্তেন তন্ময়া।
ইতিহাসস্তু বক্ষ্যামি তস্মিন্নর্থে পুরাতনম্ ৷৷
অর্থাৎ— ‘তৎকালে আমি যোগযুক্ত হইয়া পরব্রহ্মের বিষয় বলিয়াছিলাম, এখন সেই বিষয়ে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি ৷’
(মহাভারত, আশ্বমেধিকপর্ব্ব, অনুগীতা)

লক্ষ্যণীয় যে, যোগ শব্দের নানা প্রকার অর্থ আছে ৷ এখানে কোন অর্থে যোগ-শব্দটি ব্যবহৃত হয়েছে তা স্পষ্ট লেখা আছে—
‘যোগযুক্তেন ঐক্যাগ্রসমন্বিতেন’ (ভারতকৌমুদী টীকা)
অর্থাৎ এখানে যোগযুক্ত অর্থ একাগ্রতার সহিত ৷
ভগবান শ্রীকৃষ্ণ যুদ্ধকালে অর্জুনকে যুদ্ধে প্রবৃত্ত করার জন্য যে সকল বাক্য ব্যয় করেছিলেন একাগ্রতার সহিত, তা আবার এখন পুণরোক্তি করবেন কিসের নিমিত্ত? তাছাড়া অর্জুন যে গীতা ভুলে গেছেন তার দুর্বল মেধাবশত, তাকে পুণরায় গীতা বললেও সে যে আবার ভুলে যাবে না তারই বা গ্যারান্টি কি? তাই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ বললেন, “আমি সেই বিষয়ে তোমাকে প্রাচীন বৃত্তান্ত বলিতেছি ৷” অর্থাৎ সেই গীতাজ্ঞানই তিনি প্রকারন্তরে ইতিহাস গল্পের মাধ্যমে বলিবেন ৷ কেননা গল্পের মাধ্যমে যদি খুব কঠিন বিষয়ও আলোচনা করা হয়, তবে সেটা খুব সহজেই মনে রাখতে পারা যায়। এই জন্যই ভগবান শ্রীকৃষ্ণ সেই উপায়টি অবলম্বন করেন। পরবর্তীতে গীতাজ্ঞান জ্ঞান এইরুপে ভিন্নভাবে কথিত হওয়ায় একে ‘অনুগীতা’ বলা হয় ৷ অনুগীতা প্রদানের পর ভগবান বলিলেন—
পূর্বমপ্যেতদেবোক্তং যুদ্ধকাল উপস্থিতে।
ময়া তব মহাবাহো তস্মাদত্র মনঃ কুরু।।
(অশ্বমেধিকপর্ব, ৬৬/৭)
“মহাবাহু! পূর্বেই কুরুক্ষেত্রে যুদ্ধের সময় উপস্থিত হইলে, আমি তোমার নিকট ভগবদগীতাস্বরূপ এই বিষয়ই বলিয়াছিলাম, অতএব তুমি এই বিষয়ে মনোনিবেশ কর।”
অতএব এইটা সুস্পষ্ট যে ভগবান যদিও সরাসরি ভাবে অর্জুনকে পুনরায় গীতা জ্ঞান প্রদান করতে অসম্মতি জানান তবুও ইতিহাসের মাধ্যমে ভগবান এখানে গীতার বিষয়ই তুলে ধরেছেন, যাতে করে অর্জুন সেই জ্ঞানটা আয়ত্ত করতে পারে ৷
.
এইরুপে সমগ্র বিষয়টি বুঝতে না পেরে অন্ধের হস্তিদর্শনের ন্যায় কিছু অকাল-কুষ্মান্ড মূর্খ বলে থাকে যে, শ্রীকৃষ্ণ সাধারণ মানুষ মাত্র, তিনি গীতা বিস্মৃত হয়েছিলেন, গীতা তাঁহার নিজস্ব উক্তি নয়, তিনি পরমাত্মার সহিত যোগযুক্ত হয়ে উহা বলেছিলেন ৷ সেই মূর্খদের উদ্দেশ্যে বলিতেছি, আপনারা যে অশ্বমেধপর্বের রেফারেন্স দিয়ে ঐসকল কথা বলিতেছেন, ঐ অশ্বমেধপর্বেই যুধিষ্টির শ্রীকৃষ্ণকে উদ্দেশ্য করে কি বলিতেছে দেখুন—
“হে বিশ্বকর্মন! হে বিশ্বাত্মন! হে বিশ্বশ্রেষ্ঠ! আমি মনে মনে তোমাকে যেরূপ ধারণা করি, কার্য্যদ্বারাও তোমাকে সেইরুপই জানিতেছি।”
“প্রভু মধুসূদন! অগ্নি সর্বদাই তোমার তেজ হইতে উৎপন্ন হন এবং রতি তোমারই ক্রিয়াস্বরূপা, আর স্বর্গ ও মর্ত তোমারই মায়া।”
(মহাভারত, অাশ্বমেধিকপর্ব ৬৭/৮-৯)
.
অতএব—
যশ্চ মানুষমাত্রোহ‘য়মিতি ব্রুয়াৎ স মন্দধীঃ ৷
হৃষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহু পুরষাধমম্ ৷৷
—“যে লোক অজ্ঞানবশতঃ এই হৃষীকেশকে মানুষমাত্র বলিবে সে মন্দবুদ্ধি, সকলে তাকে ‘নরাধম’ বলিবে ৷”
(মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৬৫/১৯)
.
সবশেষে—
সারথ্যমর্জুনস্যাজৌ কুর্ব্বন গীতামৃতং দদৌ ৷
লোকত্রয়োপকারায় তস্মৈ ব্রহ্মাত্মনে নমঃ ৷৷
“যিনি যুদ্ধে অর্জুনের সারথ্য করিতে প্রবৃত্ত হইয়া, ত্রিভূবনের উপকার করিবার জন্য অর্জুনকে গীতামৃত দান করিয়াছেন সেই পরমব্রহ্মরূপী কৃষ্ণকে নমষ্কার করি।”
(মহাভারত, শান্তিপর্ব ৪৬/১০৬)

[Reference book: মহাভারত, হরিদাশ সিদ্ধান্তবাগীশ]

২টি মন্তব্য:

  1. চালিয়ে যান দাদা,আর্যদের মতবাদ খন্ডন করুন,শুরুতেই মূল কেটে দিন,নইলে পরে সামলাতে পারবেন না,আর মহাভারত থেকে শ্রী কৃষ্ণ যে পরমেশ্বর তার আরো রেফারেন্স দিন����

    উত্তরমুছুন
  2. Hare Krishna.
    দুস্কৃতিকারী নরাধম যুক্তির মাধ্যমে পরাস্তপূর্বক ধর্ম সংস্থাপনের জন্য আপনাকে চরণকমলে অশেষ ধন্যবাদ।

    Radhe Radhe

    উত্তরমুছুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ