রবিবার, ১৫ অক্টোবর, ২০১৭

শ্রীকৃষ্ণ কি শ্রীহরির কেশ হতে উৎপন্ন?

মূর্খ মর্দ্দন : পর্ব-১


নব্য আর্যসমাজীরা লেখে, //কৃষ্ণ যে পরমাত্বার একটি কেশের অংশ মাত্র, তা মহাভারতের আদিপর্বেও বর্ণনা করা হয়েছে এবং গীতাতেও অর্জুন হৃষীকেশ বলেই ডেকেছেন। দেখুন-
.
"দেবগন কর্তৃক প্রার্থিত হয়ে শ্রী হরি কেশদ্বয় উৎপাটন করলেন। তার একটি শুক্ল অপরটি কৃষ্ণবর্ণ। সেই কেশদ্বয় যদুকুল মহিলা রোহিনী এবং দেবকীতে আবিষ্ট হইয়াছিলো। শ্বেতবর্ণ কেশ বলভদ্র এবং কৃষ্ণবর্ণ কেশ কৃষ্ণরূপে উক্ত হন" 
#মহাভারত, আদিপর্ব ১৯৬।৩২-৩৩.//

#জবাবঃ মহাভারতের এই অংশটুকু তুলে ধরে নব্য ভন্ড আর্যসমাজীরা শ্রীকৃষ্ণকে স্বয়ং শ্রীহরি পরমেশ্বর না বলে, শ্রীহরির একটি অংশমাত্র প্রতিপন্ন করতে চায় ৷ তাদেরকে জিজ্ঞাসা করি- এখানে কেশ অর্থ কি চুল বুঝিতেছ? যদি তাহাই বোঝো তাহলে তো তোমাদের নিরাকারবাদ রসাতলে গেল!! মূলতঃ “এই কেশশব্দ অংশুবাচী অর্থাৎ কিরণ বলিয়া কথিত ৷ অতএব আমার যে কিরণরাজী প্রকাশিত হয় তাহা আমার কেশ সংজ্ঞায় অভিহিত ৷ সেইহেতু সর্বজ্ঞ মহর্ষিগণ আমাকে কেশব বলিয়া থাকেন ৷” মহাভারতের শান্তিপর্ব্বোক্ত মোক্ষধর্মপর্ব্বাধ্যায়ে অর্জুনের প্রতি শ্রীকৃষ্ণ এইরুপ বলেছেন ৷ অতএব শ্রীহরি কৃষ্ণ অংশু নিয়ে দেবকীদেবীতে আবিষ্ট হয়ে শ্রীকৃষ্ণরুপে আবির্ভূত হয়েছিলেন এবং তাঁর শ্বেত অংশু রোহিণীদেবী গর্ভস্থ অনন্তনাগাবতার বলরামে প্রবিষ্ট হয়েছিল— ইহাই তাৎপর্য ৷ মহাভারতের অন্যান্য অংশ মিল করে দেখলে ইহা সহজেই বোধগম্য হবে ৷

এরপর উক্ত মহাভারতেই শ্রীকৃষ্ণ তাঁর ‘হৃষীকেশ’ নামেরও ব্যাখ্যা করেছেন : অগ্নি সূর্য প্রভৃতি তাপ ও কিরণ দ্বারা জগতকে আহ্লাদিত (হৃষ) করে, আর সেই কিরণরাজি ভগবানের কেশ সংজ্ঞায় অভিহিত হয়; এজন্যই তাঁহার নাম হৃষীকেশ ৷
অথবা, গীতার টীকাকারদের ব্যাখ্যা অনুযায়ী—
হৃষীকেশ= হৃষীক (ইন্দ্রিয়) + ঈশ (কর্তা) ৷ 
অর্থাৎ শ্রীকৃষ্ণ ইন্দ্রিয়গণের পরিচালক পরমাত্মা হওয়ায় তাঁর নাম হৃষীকেশ ৷
গীতায় সর্বপ্রথম শ্রীকৃষ্ণের উদ্দেশ্যে হৃষীকেশ নামটি ব্যবহৃত হয়েছে ১/১৫ শ্লোকে ৷ এ শ্লোকের টীকায় মধুসূদন সরস্বতী লিখেছেন, ‘সর্ব্বেন্দ্রিয় প্রেরকত্বেন সর্ব্বান্তর্যামি সহায়ঃ পান্ডবানামিতি কথয়িতুং হৃষীকেশপদং’ ৷

অতএব, সম্পূর্ণ মহাভারত না জেনে শ্রীকৃষ্ণকে হরির অংশরুপে প্রতিপন্ন করার অপচেষ্টা বৃথা ৷ কারণ উক্ত মহাভারতেরই বিভিন্ন স্থানে বলা হয়েছে যে শ্রীকৃষ্ণ অংশ নন, তিনি স্বয়ং শ্রীহরি বিষ্ণু ৷ প্রমাণ দেখুন-

অনুগ্রহার্থং লোকানাং বিষ্ণুলোকনমস্কৃতঃ ৷
বসুদেবাত্তু দেবক্যাং প্রাদুর্ভূতো মহাযশাঃ ৷৷
“ত্রিজগতের পূজনীয় মহাযশস্বী স্বয়ং বিষ্ণু লোকের প্রতি অনুগ্রহ করিবার জন্য বসুদেব-দেবকীতে আবির্ভূত হইয়াছিলেন ৷” (আদিপর্ব, ৫৮/১৩৮)

অসতাং নিগ্রহার্থায় ধর্ম্মসংরক্ষণায় চ ৷
অবতীর্ণো মনুষ্যাণামজায়ত যদুক্ষয়ে ৷
স এষ ভগবান্ বিষ্ণুঃ কৃষ্ণতি পরিকীর্ত্ত্যতে ৷৷
“সেই ভগবান বিষ্ণুই দুর্জ্জনের নিগ্রহ এবং ধর্ম্মরক্ষার জন্য মনুষ্যমধ্যে অবতীর্ণ হইয়া যদুকুলে জন্মিয়াছিলেন; তাঁহাকেই ‘কৃষ্ণ’ বলা হয় ৷” (বনপর্ব, ২২৬/৬৮)

কর্ণের অর্জুনকে বধ করার মনোবাসনা বুঝতে পেরে ইন্দ্রদেব কর্ণকে বলেন—
যমাহুর্বেদবিদ্বাংসো বরাহমজিতং হরিম্ ৷
নারায়ণমচিন্ত্যঞ্চ তেন কৃষ্ণেন রক্ষ্যতে ৷৷
“বেদবিদ্বান লোকেরা যাহাকে বরাহ, অজিত, হরি ও অচিন্তনীয় নারায়ণ বলেন, সেই কৃষ্ণই তাহাকে রক্ষা করেন ৷” (বনপর্ব ২৬৪/২৬)

সমগ্র মহাভারত জুড়ে শ্রীকৃষ্ণের ঈশ্বরত্ব বিষয়ক এইরুপ অসংখ্য প্রমাণ আছে ৷ তথাপি যদি সেই নব্য ভন্ড আর্যসমাজীগণ নিজেদের মূঢ়়তাবশত শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর না মানে, তবে তারা নরাধম ব্যতীত আর কি?
যশ্চ মানুষমাত্রোহ‘য়মিতি ব্রুয়াৎ স মন্দধীঃ ৷
হৃষীকেশমবিজ্ঞানাত্তমাহু পুরষাধমম্ ৷৷
—“যে লোক অজ্ঞানবশতঃ এই হৃষীকেশকে মানুষমাত্র বলিবে সে মন্দবুদ্ধি, সকলে তাকে ‘নরাধম’ বলিবে ৷”
(মহাভারত, ভীষ্মপর্ব, ৬৫/১৯)

৪টি মন্তব্য:

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ