সোমবার, ৯ অক্টোবর, ২০১৭

শঙ্করাচার্য কি শ্রীকৃষ্ণকে ঈশ্বর মানতেন?


নব্য আর্যসমাজীদের মধ্যে একটা ভ্রান্ত ধারণা তৈরি হয়েছে যে আদি শঙ্করাচার্য নাকি অবতারবাদ মানতেন না এবং শ্রীকৃষ্ণকে বিষ্ণুর অবতার ও স্বয়ং ভগবান বলে মানতেন না। হতে পারে আর্যসমাজীরা কেবল হিন্দুদের বিভ্রান্ত করার জন্য ও ভুল পথে চালিত করার জন্য এইরকম ভ্রান্ত অপপ্রচার করে থাকে। যাই হোক, বর্তমান হিন্দু যুবসমাজ যাতে এইরকম ভুল ধারণার বশবর্তী না হয় তার জন্য আর্য সমাজীদের এই ভ্রান্ত ধারণার নিরসন হওয়া দরকার।

জগদগুরু আদি শঙ্করাচার্য তাঁর লেখা গীতাভাষ্যের উপক্রমণিকাতেই স্বীকার করেছেন যে শ্রীকৃষ্ণ বিষ্ণুর অবতার ছিলেন ও সাক্ষাৎ ভগবান ছিলেন। তিনি লিখেছেন, ‘.....দীর্ঘেণ কালেন অনুষ্ঠাতৃণাং কামোদ্ভবাদ হীয়মানবিবেকবিজ্ঞানহেতুকেন অধর্মেণ অভিভূয়মানে ধর্মে প্রবর্ধমানে চ অধর্মে, জগতঃ স্থিতিং পরিপিপালয়িষুঃ স আদিকর্তা নারায়ণাখ্যো বিষ্ণুঃ ভৌমস্য ব্রহ্মণো ব্রাহ্মণত্বস্য রক্ষণার্থং দেবক্যাং বসুদেবাদ্ অংশেন কৃষ্ণ কিল সম্বভূব।’
অর্থাৎঃ  বহুকাল পরে যখন ধর্মানুষ্ঠানকারীদের অন্তঃকরণে কামনার বৃদ্ধি হওয়ার কারণে ও বিবেকবিজ্ঞানের হ্রাস হওয়ার কারণে উৎপন্ন অধর্মের দ্বারা ধর্ম ক্ষীণ হতে লাগল তখন জগতের স্থিতি রক্ষা করার জন্য আদিকর্তা নারায়ণনামক শ্রীবিষ্ণুভগবান ভূলোকের ব্রহ্মের অর্থাৎ ভূদেব(ব্রাহ্মণদের) ব্রাহ্মণত্ব রক্ষা করার জন্য শ্রীবসুদেব দ্বারা দেবকীর গর্ভে নিজের অংশে (লীলাবিগ্রহদ্বারা) শ্রীকৃষ্ণরূপে প্রকট হলেন।

তিনি আরো লিখেছেন ‘স চ ভগবান্ জ্ঞানৈশ্বর্যশক্তিবলবীর্যতেজোভিঃ সদা সম্পন্নঃ ত্রিগুণাত্মিকা বৈষ্ণবীং স্বাং মায়াং মূলপ্রকৃতিং বশীকৃত্য অজঃ অব্যয়ো ভূতানাম্ ঈশ্বরো নিত্যশুদ্ধবুদ্ধমুক্ত­স্বভাবঃ অপি সন্ স্বমায়য়া দেহবান্ ইব জাত ইব চ লোকানুগ্রহং কুর্বন্ ইব লক্ষ্যতে।’
অর্থাৎঃ  জ্ঞান, ঐশ্বর্য, শক্তি, বল, বীর্য আর তেজ আদি সম্পন্ন সেই ভগবান যদিও অজ, অবিনাশী, সকল ভূতের ঈশ্বর ও নিত্য, শুদ্ধ, বুদ্ধ, মুক্ত স্বভাব বিশিষ্ট হন, কিন্তু তিনি নিজের ত্রিগুণাত্মিকা মূল প্রকৃতি বৈষ্ণবী মায়াকে বশীভূত করে নিজের লীলাদ্বারা শরীর ধারণ করেন বলে ও লোকানুগ্রহ করে থাকেন বলে প্রতিভাত হতে থাকেন। (অর্থাৎ পরমার্থতঃ সাধারণ মনুষ্যের ন্যায় দেহধারণ করেন না)



গীতা ৯/১১ এর ভাষ্যে শঙ্করাচার্য বলেছেন, ‘মূঢ়গণ ভগবানের নিত্যমুক্ত নিত্যবুদ্ধ সত্তার কথা জানেনা এবং তিনিই যে সর্বভূত মহেশ্বর একথা তারা জানে না, পরন্তু তিনি যখন লোক সম্বন্ধিনী মনুষ্যতনু আশ্রয় করেন তখন তাঁকে শুধুমাত্র মানুষ মনে করে অবজ্ঞা করে, এবং পরমাত্মাতত্ত্ব অপেক্ষাও অন্তরতম সেই তত্ত্বকে অবজ্ঞা করার জন্য বারংবার সংসারে অকিঞ্চন ও শোচনীয় দশায় পতিত হয় ৷’


কোন মন্তব্য নেই:

একটি মন্তব্য পোস্ট করুন

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ