বৃহস্পতিবার, ১৬ জানুয়ারী, ২০২০

পাগলা দয়ানন্দের ভাগবত খণ্ডন নামক প্রহসন

(সত্যার্থ-প্রকাশ, ৫ম সংস্করণ)

দয়ানন্দ তার সত্যার্থ-প্রকাশ নামক সত্যনাশী গ্রন্থের একদাশ সমুল্লাসে লিখেছেঃ— “এক্ষণে, যাহাকে শ্রীমদ্ভাগবত বলা হয়, তাহার লীলাখেলা শোন” — এই কথা দিয়ে তিনি ভাগবত সমীক্ষা শুরু করেছেন ৷ এই সমীক্ষায় লিখেছেন, “....বাকি রইল হিরণ্যকশিপু ৷ হিরণ্যকশিপুর পুত্র প্রহলাদ এক জন ভক্ত ছিল ৷ সে পিতা কর্তৃক বিদ্যাশিক্ষার্থ পাঠশালায় প্রেরিত হইয়াছিল। প্রহ্লাদ বিদ্যালয়ের অধ্যাপকদিগকে বলিত, ‘আমার শ্লেটে রাম নাম লিখিয়া দাও’ । তাহার পিতা তাহা শুনিয়া তাহাকে বলিল, তুই আমার শত্রুর ভজনা করতেছিস কেন ? বালক তাহা মানিল না ।
তখন তাহার পিতা তাহাকে বাঁধিয়া পর্বত হইতে ফেলিয়া দিল, কূপে নিক্ষেপ করিল। কিন্তু তাহাতে তাহার কিছুই হইল না। হিরণ্যকশিপু একটি লৌহস্তম্ভ অগ্নিতে উত্তপ্ত করিয়া প্রহ্লাদকে বলিল, ‘যদি তোমার ইষ্টদেব রাম সত্য হয় তাহা হইলে, এই স্তম্ভ ধরিলেও তুমি জ্বলিবেনা’। প্রহ্লাদ তাহা ধরিতে উদ্যত হইল। তখন তাহার মনে সংশয় উপস্থিত হইল, দগ্ধ না হইয়া সে রক্ষা পাইবে কিনা । নারায়ণ সেই স্তম্বের উপর ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পিপীলিকা শ্রেণী চালিত করিলেন।
প্রহ্লাদ তাহাতে নিশ্চিত হইয়া স্তম্ভ ধরিল। স্তম্ভ  বিদীর্ণ হইল। স্তম্ভের ভিতর হইতে নৃসিংহ নির্গত হইয়া তাহার পিতাকে ধরিয়া উদর বিদীর্ণ করিতে লাগিলেন । অনন্তর নৃসিংহ প্রহ্লাদ কে  স্নেহের সহিত লেহন করিতে লাগিলেন। নৃসিংহ প্রহ্লাদকে বলিলেন, ‘তুমি বর প্রর্থনা কর’। প্রহ্লাদ পিতার সদগতি প্রর্থনা করিল। নৃসিংহ বরদান করিলেন, ‘তোমার একবিংশ পুরুষ সদ্গতি প্রাপ্ত হইয়াছে’ ৷”

কিন্তু ভাগবতের নামে দয়ানন্দ যে গল্প বলেছে তার সাথে ভাগবতে বর্ণিত কাহিনী ও তথ্যের মিল নেই ৷ দয়ান্দের ভক্তবৃন্দ তথা দয়ানন্দীগুলোও ভাগবত খুজে দেখেছে কিন্তু তাদের গুরু যে মিথ্যাবাদী তা তারা বুঝতে পেরেছে ৷ কিন্তু গুরুর দোষ ঢাকার জন্য তারা সাহিত্যকার থিওরী আনে। বলে যে, এগুলো ভাগবতে নাই কিন্তু ভাগবত সাহিত্যে আছে অর্থাৎ ভাগবতকে ঘিরে সৃষ্ট সাহিত্যে আছে ৷ কিন্তু দয়ানন্দ এটা কোথাও বলেন নাই যে তিনি এইসব কথা ভাগবতে পান নাই,তবে হিন্দি সাহিত্য বা আফ্রিকার সাহিত্যে পেয়েছেন ৷
কোন লেখক, কোন সাহিত্যিক কি লিখেছে তা ধরে যদি শাস্ত্র খণ্ডন করা হয়,তাহলে কালকে কেউ জাকির নায়েকের বই পড়ে অর্থববেদ খণ্ডন করবে, পরশু প্রবীর ঘোষের বই পড়ে বেদ খণ্ডন করবে ৷
যেহেতু শ্রীমদ্ভাগবতে ঐসব ঘটনার কোন উল্লেখ নাই সেহেতু কোন সাহিত্যে কি আছে বা সাহিত্যিকদের কথা ধরে ভাগবত খণ্ডণ করা মূর্খতা ।
আবার কোন কোন দয়ানন্দী এরুপও বলে যে, দয়ানন্দ এখানে ভাগবত বলতে শ্রীমদ্ভাগবদ পুরাণকে বোঝায়নি, ভাগবত বলতে কৃষ্ণের কথা আছে এমন সমস্ত গ্রন্থকেই বোঝায় ৷
আসলে দুর্জনের ছলের অভাব হয় না ৷ তাই এরকম কতই না কুযুক্তি তারা আবিষ্কার করবে ৷ আর এর দ্বারা এটাই বারংবার প্রতীয়মান হচ্ছে যে, দয়ানন্দের আসলে ভাগবত পুরাণ খণ্ডন করার মুরোদ নেই ৷

যাহোক, এখন দয়ানন্দ কৃত ভাগবত সাহিত্যের হাস্যকর ও বালকোচিত সমীক্ষার নমুনা দেখা যাক:—
দয়ানন্দ: এখন দেখ, এও এক গল্পীর ভাই গল্পী । যদি ভাগবতের কোন শ্রোতা অথবা পাঠককে ধরিয়া পাহাড়ের উপর হইতে নিক্ষেপ করা হয়, তবে কেহই তাহাকে রক্ষা করিতে পারিবেনা ৷ সে চুর্ণ-বিচূর্ণ হইয়া মরিবেই।
==> (আচ্ছা, যেকোন ভাগবত পাঠক বা শ্রোতা আর প্রহলাদ কি এক হলো যে, প্রহ্লাদকে পর্বত হতে নিক্ষেপ করা হয়েছিল বলে ভাগবত পাঠক ও শ্রোতাদেরও ধরে ধরে পাহাড় হতে নিক্ষেপ করিতে হবে?? তাহাই যদি হয় তবে ওহে দয়ানন্দ, তোমাকেই প্রথমে  পাহাড়ের উপর থেকে নিক্ষেপ করা হোক, কারণ তুমিও তো ভাগবত পাঠক বা শ্রোতা ৷ করণ ভাগবতের সমীক্ষা করতে হলে তোমাকে প্রথমে ভাগবত পাঠ বা শ্রবণ করতে হবে তো!! কিন্তু আপসোস, তুমি এক্ষণে নরকে গমন করিয়া যমরাজের হাতে পিটুনী খাচ্ছ ৷ তাই তোমার স্থানে তোমার ভক্তবৃন্দ তথা দয়ানন্দীদের পর্বত হতে আছাড় মারা হোক :-D )

দয়ানন্দঃ হ্লাদের পিতা তাহাকে বিদ্যাশিক্ষার জন্য পাঠাইয়া কি কোন মন্দ কর্ম করিয়া ছিলেন?? কিন্তু  প্রহ্লাদ এমনই মূর্খ,সে অধ্যয়ন পরিত্যাগ করিয়া বৈরাগী হইতে চাহিয়াছিল।
==> (ওহে দয়ানন্দ, তোমার পিতা তোমাকে বিবাহ দিতে গিয়া কি মন্দ কর্ম করেছিল যে তুমি বিবাহ পরিত্যাগ করিয়া পালিয়ে বৈরাগী হয়েছিল! তাহলে তুমি কতবড় মূর্খ ভাব একবার!)

দয়ানন্দঃ প্রজ্বলিত স্তম্ভে পিপীলিকা বিচরণ করিতেছিল এবং প্রহ্লাদ স্তম্ভ  স্পর্শ করিয়াও দগ্ধ হইলো না । যে ব্যক্তি এ সকল কথা সত্য বলিয়া বিশ্বাস করে, তাহাকেও উত্তপ্ত স্তম্ভের সংলগ্ন করা উচিত। যদি সে দগ্ধ না হয় তবে মানিতে হইবে যে, প্রহ্লাদ ও দগ্ধ হয় নাই। অধিকন্তু, নৃসিংহও জ্বলিয়া গেলোনা কেন??
 ==> (আহা! যে পাগলা দয়ানন্দ নিজেই ৮ম সমুল্লাসে লিখেছে যে, সূর্যের মধ্যেও মনুষ্যাদি প্রাণী বাস করে(লিঙ্কে দেখুন), সেই দয়ানন্দের মুখে এইরুপ কথা কি শোভা পায়? অধিকন্তু, দয়ানন্দের মৃতদেহ অগ্নিতে পুড়ে ছাই হয়ে গিয়েছিল কেন? পার্থিব অগ্নিতেই যার এই অবস্থা জ্বলন্ত অগ্নিকুন্ডরুপ সূর্যে সে কিভাবে বাস করবে?
আর পরম করুণাময় ভগবানের ইচ্ছায় মূকও বাচাল হয়, পঙ্গুও পর্বত লঙ্ঘন করিতে পারে, সেই ভগবানের ইচ্ছায় প্রজ্বলিত স্তম্ভে পিরীলিকার বিচরণ, প্রহ্লাদের অগ্নিতে অগ্নিতে দগ্ধ না হওয়া কি অসম্ভব কিছু?? কেবল নাস্তিকরাই এ বিষয়ে সংশয়াপন্ন হতে পারে, ধার্মিকরা নয় ৷)


প্রাসঙ্গিক পোস্টঃ দয়ানন্দ মুখচপেটিকা - শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ কি বোপদেব রচিত?

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ