শুক্রবার, ২০ এপ্রিল, ২০১৮

ভগবান শ্রীকৃষ্ণের দামবন্ধন লীলা তাৎপর্য বিশ্লেষণ




গোপাল দধির ভাণ্ড ভাঙিয়াছেন ৷ মা যশোদা ক্রুদ্ধা হইয়াছেন ৷ পলায়নপর গোপালকে ছুটিয়া গিয়া হাত ধরিয়াছেন ৷ তারপর বাঁধিয়া রাখিতে ইচ্ছা করিয়াছেন ৷ রজ্জু দিয়া গোপালের কটিদেশ বন্ধন করিয়া একটি উদূখলের সঙ্গে বাঁধিয়া রাখিতে মা যশোদা মনে মনে ঠিক করিয়াছেন ৷ গৃহ হইতে রজ্জু আনাইয়া বাঁধিতে আরম্ভ করিলেন ৷ গোপাল বারংবার বলিতে লাগিলেন, “মা, আমায় বেঁধো না ৷” মা গোপালের কথা না শুনিয়া বাঁধিতে চেষ্টা করিতে লাগিলেন ৷ তাঁহার রজ্জুটা কটিবেষ্টন করিতে দুই আঙুল ছোট হইল ৷ মা ঐ রজ্জুর সঙ্গে আর একটা রজ্জু বাঁধিলেন ৷ তারপরও দুই আঙ্গুল ছোট হইল ৷ ঘরে যত বন্ধনযোগ্য দড়ি ছিল— একটার পর একটা একত্র বন্ধন করিয়াও গোপালের কটিদেশ বন্ধন করিতে সক্ষম হইলেন না ৷ প্রত্যেকবারই কম পড়িতে লাগিল ৷ মায়ের জেদ চাপিয়া গেল ৷ পাশের বাড়ীর গোপীদের ঘরে যত দড়ি ছিল চাহিয়া আনাইয়া যোগ করিতে লাগিলেন কিন্তু কি আশ্চর্য! প্রত্যেকবারই একই অবস্থা, দুই আঙ্গুল কম ৷ মা কিছুই বুঝিতে পারিতেছেন না ৷
এখানে দুইটি বিষয় চিন্তনীয় ৷ কোলের শিশু গোপালকে মা বাঁধিতে পারিতেছেন না কেন? আর একটি বিষয় প্রত্যেকবার দুই আঙ্গুল পরিমাণ ছোট কেন?
প্রথমটির উত্তর শুকদেব বলিয়াছেন—
“ন চান্তর্ন বহির্যস্য ন পূর্বং নাপি চাপরম্ ৷
পূর্বাপরং বহিশ্চান্তর্জগতো যো জগচ্চ যঃ ৷৷”
                                                 (ভাগবত, ১০/৯/১৩)
যাহার অন্তর বাহির নাই, অগ্রপশ্চাৎ নাই, যিনি জগন্ময়— মা তাঁহাকে কেবল কোলের শিশু মনে করিয়া বাঁধিতে প্রয়াস পাইতেছেন ৷ শুকদেবের কথার তাৎপর্য এই, গোপাল যখন মায়ের কোলে শিশুটি ঠিক তখনই তিনি বিশ্বব্যাপী ভূমা ৷ তিনি যখন ছোট তখনই বড় ৷ তিনি যুগপৎ সমীম ও অসীমরুপে অবস্থান করেন ৷

আরেকটি প্রশ্ন, প্রতিবার দুই আঙুল পরিমাণ ছোট কেন? এক আঙুল সাধকের সাধন-তপস্যা, আরেক আঙুল ভগবানের কৃপা ৷ প্রথমত সাধক সাধনার দ্বারা ভগবানকে পেতে চাইবেন, কিন্তু সাধন-তপস্যায় একসময় তিনি  মা যশোদার মতো ক্লান্ত হয়ে পড়িবেন, দেখিবেন যে সাধনার দ্বারা ভগবানকে কিছুতেই বাঁধা যাইতেছে না, তখন ভগবান ভক্ত-সাধককে কৃপা করিয়া তিনি নিজেই তার কাছে ধরা দিবেন ৷

নায়মাত্মা প্রবচনেন লভ্যো
            ন মেধয়া ন বহুনা শ্রুতেন ৷
যমেবৈষ বৃণুতে তেন লভ্য-
       স্তস্যৈষ আত্মা বিবৃণুতে তনুং স্বাম্ ।। কঠঃ ১৷২৷২৩
—“এই পরমাত্মাকে শাস্ত্র ব্যাখ্যান দ্বারা লাভ করা যায় না, মেধা দ্বারাও নয়, বহু শাস্ত্র শ্রবণের দ্বারাও নয় ৷ যাহাকে এই পরমাত্মা বরণ করিয়া নেন, তাহারই লভ্য, তাহার নিকটেই তিনি মেলে ধরেন আপন তনু ৷”

ইহাই বেদান্তের মর্মকথা!


৷৷ ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু ৷৷


1 টি মন্তব্য:

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ