মোহিনী অবতার সাক্ষাৎ বিষ্ণু নয়, তা বিষ্ণুর বহিরঙ্গা মায়াশক্তির অবতার । মায়া বিষ্ণুর অংশ ও বিষ্ণুর অধিষ্ঠান বা ইচ্ছা বিনা মায়ার কর্ম-সামর্থ্য নাই । সুতরাং বিষ্ণু বিনা মায়ার স্বাতন্ত্র্যত্ব নাই, এজন্য মোহিনী অবতার সাক্ষাৎ বিষ্ণু না হলেও তাকে বিষ্ণুর অবতার-ই বলা হয় ।
যখন শঙ্করজীর নিকট সংবাদ পৌছায় যে ভগবান্ মোহিনী অবতারের দ্বারা অসুরদের মোহিত করেছেন আর দেবতাদেরকে অমৃত পান করিয়েছেন, তখন শঙ্কর জী বৃষ-বাহনে চড়ে ভগবান্ বিষ্ণুর দর্শন করতে আসলেন । ভগবানও তাঁকে বেশ স্বাগত-সৎকার করলেন ।
শঙ্কর জী প্রার্থনা করলেন, প্রভু ! যে মোহিনী অবতারের দ্বারা আপনি অসুরদের মোহিত করেছেন আর দেবতাদেরকে অমৃত পান করিয়েছেন, সেই রুপ আমি দর্শন করতে চাই ।
শিব জী কেন বিষ্ণুর মোহিনীরূপ দর্শন করতে চাইলেন তার একটি গূঢ় কারণ আছে ৷ ব্যাপারটি হচ্ছে,
দেবতা ও অসুরগণের মধ্যে বিষ্ণুর সহায়তাই দেবতারা বিজয় প্রাপ্ত হয়েছে, অসুররা অমৃতের ভাগ হতে বঞ্চিত হয়েছে ৷ এমতাবস্থায়, দেবতারা যেমন বিষ্ণুর শরণাপন্ন হয়ে জয় লাভ করেছে, তদ্রুপ অসুররা যদি শিবের শরণাপন্ন হন? শিব ভক্তবৎসল, তিনি শরণাগতকে বিমুখ করেন না ৷ তাই যদি অসুররা শিবের শরণাপন্ন হয়, তখন ত শঙ্করকে বিষ্ণুর বিপক্ষে দণ্ডায়মান হতে হবে ৷ বিষ্ণু শিবের আত্মা, আবার শিব বিষ্ণুর আত্মা, উভয়ের মধ্যে যাতে নিজ ভক্তদের সমর্থন হেতু সংঘর্ষ না বাঁধে তার উপায় কি? তাই অসুরা শিবের শরণ নেওয়ার পূর্বেই শিব জী বিষ্ণুর নিকট পৌছে গেলেন, এবং তাঁর মোহনীরূপ দেখতে চাইলেন ৷ উদ্দেশ্য এই যে, মোহনীরূপ দেখে স্বয়ং শিবও মোহিত হয়ে যাবেন, যাতে অসুররা মনে করে, যখন শিবও বিষ্ণুর মোহিনীরূপে মোহিত হয়ে গেল, তখন শিবের শরণাপন্ন হয়ে লাভ কি?
তো, শিবের প্রার্থনায় বিষ্ণু মোহিনীরূপ ধারণ করলেন, আর শিব তাতে মোহিত হয়ে গেল ৷ হস্তী যেমন হস্তিনীর পশ্চাতে ধাবিত হয়, তেমনি শিবও মোহিনীরূপের প্রতি আকৃষ্ট হয়ে তাঁর প্রতি ধাবিত হলেন ৷ শিব কামের বশীভূত হয়ে গেলেন, তাঁর রেত পতিত হলো ৷ শিবের রেত অমোঘ, সুতরাং তা নিষ্ফল হতে পারে না, যে যে স্থানে শিবের রেত পতিত হলো সে স্থান যেন সোনা-রূপার খনিতে পরিণত হলো অর্থাৎ সে সকল স্থান বিশেষ ঐশ্বর্যসম্পন্ন হয়ে গেল ৷
মূর্খ দয়ানন্দীরা সোনা-রুপার খনিকে আক্ষরিক অর্থে বিচার করে, তাই বলে যে, শিবের বীর্য (রেত) থেকে কি করে সোনা-রূপার খনি হতে পারে? “পূর্ণিমার চাঁদ যেন ঝলসানো রুটি” এই বাক্যে ঐ মূর্খ দয়ানন্দী অগ্নিবিড়ীখোর পোলাপাইনগুলা চাঁদকে সত্য সত্যিই রুটি মনে করে খেতে উদ্যত হতে পারে! আসুরিক বুদ্ধি হলে যা হয় আর কি!!
দেখ, ভাগবতের মূল শ্লোকে ‘রেতঃ’ শব্দ আছে, রেত শব্দের অর্থ কেবল বীর্যই নয়, নিঘণ্টু অনুসারে রেত অর্থ জল, বৃষ্টি ইত্যাদিও হয় ৷ সুতরাং মোহিনী রূপের পিছে ধাবিত হওয়ার সময় শিবের কৃপাবৃষ্টি বর্ষিত হয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন স্থান ঐশ্বর্যসম্পন্ন হয়-- এই অর্থ ৷
|
নিঘণ্টু ১.১২
|
বেদেও রেত কামনা করা হয়েছে, “রেতোধা রেতো দধাতু” (যজুঃ ২৩/২০)
এর অর্থ: রেতোধা= হে রেতধারণকারী, রেতো= রেত, দধাতু= আমাকে প্রদান করুন ৷
দয়ানন্দীদের বাপ পুরাণবিদ্বেষী কালপ্রিট দয়ানন্দ এই মন্ত্রের ভাষ্যে লিখেছে--
|
যজুঃ ২৩/২০, দয়ানন্দ ভাষ্য
|
(রেতোধাঃ) যো রেতঃ শ্লেষমালিঙ্গনং দধাতি সঃ (রেতঃ) বীর্য পরাক্রম্ (দধাতু) ৷
দয়ানন্দ সংস্কৃতে যা লিখেছে তার অর্থ--আলিঙ্গন প্রদানকারী বীর্য পরাক্রম দান করুক ৷ কিন্তু দয়ানন্দের ভাষ্যের হিন্দী অনুবাদে উল্টিয়ে-পাল্টিয়ে টুইষ্ট করে ভিন্ন অর্থ লেখা হয়েছে!
যাহোক, বেদ বা দয়ানন্দের ভাষ্যে রেত-বীর্য থাকলে দয়ানন্দীরা তা স্বাদু স্বাদু বলে গিলে ফেলে, কিন্তু পুরাণের বেলায় তাদের গলায় বাঁধে কেন???