শুক্রবার, ১ মে, ২০২০

নাসা আবিষ্কৃত রামসেতুর ওপর নতুন রিপোর্ট যা না পড়লেই নয়!




২০০২ সালে নাসার স্যাটেলাইটে ভারত ও শ্রীলঙ্কার সমুদ্রমধ্যে একটি দীর্ঘ রেখাপথের ছবি ধরা পরে ৷ তখন থেকেই হিন্দুমাত্রেরই দাবি যে এটা রামসেতু ৷ কেননা বাল্মিকী মুনি রচিত রামায়ণে উল্লেখ আছে যে, লঙ্কার রাজা রাবণ সীতাদেবীকে অপহরণ করে নিয়ে গেলে ভগবান শ্রীরামচন্দ্র লঙ্কা হতে সীতাদেবীকে উদ্ধারের জন্য বানরসেনা দ্বারা সমুদ্রের ওপর ভাসমান সেতু তৈরী করিয়েছিলেন —ইহা কোন হিন্দুরই অজানা নয় ৷

কিন্তু প্রথমদিকে অনেকে এটাকে মানুষ নির্মিত সেতু হিসেবে মানতে নারাজ ছিল ৷ তারা বলে ছিল যে, এটা প্রাকৃতিক বালুচরের সেতু ছাড়া আর কিছুই নয়।

এরপর আমেরিকার একদল বিজ্ঞানী ঐ সেতুটির উপর কিছু গবেষণা চালান ৷ তারা পর্যালোচনা করে বলেন যে, প্রাকৃতিকভাবে বালু জমা হয়ে ঐরুপ সেতু হওয়া সম্ভব ৷ কিন্তু বালুচরের ওপর বিদ্যমান পাথরগুলো কোথা থেকে এলো?? তারা তাদের পরীক্ষা থেকে জানতে পারেন যে, ওখানকার জমা বালির বয়স চারহাজার বছরমাত্র, কিন্তু পাথরগুলোর বয়স সাতহাজার বছর! এ থেকে প্রতীয়মান হয় যে, প্রাকৃতিকভাবে বালি জমার বহুপূর্ব হতেই ঐ ভাসমান পাথরগুলো ওখানে ছিল, আর পাথরগুলো পথের মতো শৃঙ্খলাবদ্ধভাবে সমুদ্রমধ্যে কেবল তখনই থাকা সম্ভব যদি কিনা কোন মানুষ সেখানে ঐভাবে পাথরগুলো রাখে ৷ সুতরাং এই সেতু হিন্দুদের প্রচলিত বিশ্বাস অনুযায়ী হিন্দুদের ভগবান রাম দ্বারা নির্মিত সেতু হতে পারে ৷ —এইকথা বলেছেন আমেরিকার বিজ্ঞানীদল ৷
বিজ্ঞানীদলের বক্তব্য ভিডিওতে দেখুন )

বর্তমান রামসেতুটি ৩০ মাইল (প্রায় ৫০ কিলোমিটার) দীর্ঘ ৷ দেখা যায় যে, সেতু সংশ্লিষ্ট এলাকাতে সমুদ্র অগভীর, সেখানে উত্তাল স্রোত নেই অর্থাৎ সমুদ্র সেখানে শান্ত স্বভাবের ৷ ( ভিডিওতে দেখুন )
এইরুপ হওয়ার কারণ কি? এর উত্তর রামায়ণেই আছে :—

অয়ং রাম নলো নাম তনয়ো বিশ্বকর্ম্মণঃ ৷
পিত্রা দত্তবরঃ শ্রীমাংস্তব চাপি হিতে রতাঃ ৷৷
বানরোহ’য়ং নরশ্রেষ্ঠ যুজ্যতাং সেতুকর্ম্মণি ৷
এষ সেতুং মহোৎসাহঃ করোতু ময়ি বানরঃ ৷৷
তমহং ধারয়িষ্যামি ভবতঃ কার্য্যগৌরবাৎ ৷
গ্রাহা ন বিচরিষ্যন্তি ন চ বাস্যতি মারুতঃ ৷৷
সলিলং স্তম্ভয়িষ্যহ’হং নলস্য তব চাজ্ঞয়া ৷
[রামায়ণম্ (গৌড়ীয়-পাঠ), সুন্দরকাণ্ডম্ ৯৬/১৪—১৭]
সমুদ্রের অধিষ্ঠাতা সাগরদেবতা শ্রীরামকে বলেছিলেন— 
“হে রাম, এই ‘নল’ বিশ্বকর্মার পুত্র, ইহার প্রতি ইহার পিতার বর দেওয়া আছে এবং ইনি আপনার হিতাকাংক্ষী ৷ হে নরবর, এই বানরকে সেতু-নির্মাণে নিযুক্ত করুন ৷ ইনি আমার উপর মহা উৎসাহে সেতু নির্মাণ করুন ৷ আপনার কার্যের গুরুত্ব-বশত আমি সেই সেতুকে ধারণ করিব, জলজন্তুগণ বিচরণ করিবে না এবং বায়ু প্রবাহিত হইবে না ৷ আপনার আজ্ঞায় এবং নলের আজ্ঞায় আমি জলরাশিকে স্তব্ধ করিয়া রাখিব ৷”


অর্থাৎ ভগবান শ্রীরামচন্দ্রের সেতু ধারণ করে রাখার জন্যই সাগর সেখানে শান্ত স্বভাবের হয়ে আছে ৷

রাময়ণে উল্লেখ আছে,
“অন্যাংশ্চ বৃক্ষানাদায় গিরীণাং শিখরাণি চ ৷
সমুদ্রসলিলে সেতুং চক্রুঃ শতসহস্রশঃ ৷৷
কেচিৎ পর্ব্বতশৃঙ্গাণি শিলাশ্চ কনকোজ্জ্বলাঃ ৷
উৎপাট্যোৎপাট্য নিদধুর্নলহস্তে মহৌজসঃ ৷৷”
                                  (ঐ, ঐ ৯৭/৯-১০)
“অন্যে তু সকৃদাদায় গিরীণাং শিখরাণি চ ৷
সাগরস্য জলে চক্রুঃ সেতুং শতসহস্রশঃ ৷৷”
                                   (ঐ, ঐ ৯৭/১৯)
রামের আজ্ঞায় বানরসকল ‘গিরীণাং শিখরাণি’ পর্বতের শিখর হতে শত সহস্র পাথর খন্ড ও শিলা ভেঙে ভেঙে এনে ‘নল’ নামক বানরের হাতে অর্পণ করত, আর তা দিয়ে নল নিপুণ হস্তে সেই সেতু নির্মাণ করেছিল ৷

তানি পর্ব্বতশৃঙ্গাণি তৃণকাষ্ঠানি চৈব হি ৷
সমুদ্রে ক্ষিপ্যমাণানি ন বিষেদুঃ কথঞ্চন ৷৷
                                   (ঐ, ঐ ৯৭/১৫)
অর্থাৎ সমুদ্রে নিক্ষিপ্ত সেই সমস্ত পাথরখণ্ডগুলো জলে নিমগ্ন হয়েছিল না, ভাসমান ছিল ৷

কূলে তূত্তর আরব্ধো লঙ্কাকূলে প্রতিষ্ঠিতঃ ৷
সাগরস্যৈষ সীমন্তশ্চিত্ররূপো ব্যদৃশ্যত ৷৷
বিশালঃ সুকৃতঃ শ্রীমান্ সর্ব্বভূতসমাহিতঃ ৷
অশোভত ততঃ সেতুঃ সীমন্ত ইব সাগরে ৷৷
                                 (ঐ, ঐ ৯৭/৪১-৪২)
“সমুদ্রের উত্তরকূলে আরব্ধ এবং লঙ্কার কূলে সমাপ্ত সাগরের এই সীমন্তরূপ সেতু অতিসুন্দর দেখাইতেছিল ৷ সুনির্ম্মিত অতিসুন্দর সর্ব্বপ্রাণীর হিতকর বিশাল সেতু সমুদ্রে সীঁথির ন্যায় শোভা পাইতে লাগিল ৷”

“বন্ধনাদেব সেতোস্ত জগ্মুস্মাসেন সাগরম্ ৷৷” (ঐ, ঐ ৯৭/৪৩)
অর্থাৎ বানরসেনা সমুদ্রের ওপর সেতুটি একমাসে নির্মাণ করেছিল ৷


হিন্দুদের জন্য বড় দুঃখ ও হতাশাজনক বিষয় এই যে, রামায়ণের মতো অতি প্রাচীন গ্রন্থে ভারত ও শ্রীলঙ্কার মধ্যকার সেতুটি রামসেতু হিসেবে সুস্পষ্ট বর্ণনা থাকলেও সেতুটির নাম রামের সাথে সম্পর্কিত না করে সেটার নাম রাখা হয়েছে ‘আদম ব্রীজ’ (Adam Bridge) ৷ এই নাম রেখেছে খ্রিষ্টানধর্মে বিশ্বাসী পশ্চাত্যমহল ৷ খ্রিষ্টান ও মুসলমানদের বিশ্বাস অনুযায়ী আদম হচ্ছে সৃষ্টির আদিমানব ৷ আদি অর্থে আদম শব্দটির প্রয়োগ ঘটালে আদম ব্রীজ অর্থ হয় ‘আদি বা প্রচীন সেতু’ ৷ তারা এই নাম তখন রেখেছিল যখন তাদের ধারণা ছিল যে এটা একটি প্রাকৃতিক সেতু মাত্র ৷ তবে মুসলমানরা বিশ্বাস করে থাকে যে, হযরত আদম (আ) শ্রীলঙ্কা থেকে ভারত গমন করেছিলেন এই সেতুর মাধ্যমে (Ref: Islam Translated By Ronit Ricci, page. 135) ৷ কিন্তু এখন পরীক্ষামূলকভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, সেতুটি মনুষ্য নির্মিত, প্রাকৃতিক নয় ৷ আর খ্রিষ্টানদের বাইবেল, বা মুসলমানদের কোরান, কোনখানেই উল্লেখ নাই যে আদম (আ) কোনো ব্রীজ তৈরী করেছিল ৷ আর একা আদমের পক্ষে এমন ব্রীজ তৈরী সম্ভবও না ৷ সুতরাং নিসন্দেহে সেতুটি রামের নির্দেশে বানরসেনা দ্বারা তৈরী হয়েছিল ৷ বর্তমান সেতুটি রামসেতুর অবশেষরূপে বিদ্যমান ৷

যাবৎ সমুদ্রস্তাবচ্চ সেতুরেবং ধরিষ্যতি ৷
যাবচ্চ সাগরে কার্ত্তিস্তাবদ্রামে ভবিষ্যতি ৷৷ (ঐ, ঐ ৯৭/৩৫)
“যতদিন সমুদ্র থাকিবে, ততদিন এই সেতুও থাকিবে এবং রামের সমুদ্র-প্রমাণ গৌরব লাভ হইবে ৷”


সুতরাং গর্ব করে বলুন, আমি হিন্দু ৷ আমার ধর্ম বাস্তব ও সত্য ৷ আমার রাম সত্য, আমার রামায়ণ সত্য, আমাদের সকল অবতার সত্য, সকল উপাখ্যান সত্য ৷ জয় শ্রী রাম ৷



………………………………………………………………………………
Reference vedio links:
1) https://youtu.be/odUtqDz4lEk
2) https://m.youtube.com/watch?v=1iGqx47LYHA
3) https://m.youtube.com/watch?v=JawCN6Ad0Zc

Reference book:
রামায়ণম্ (গৌড়ীয় পাঠ), সুন্দরকাণ্ডম্
সম্পদনায়— শ্রীনরেন্দ্রনাথ বেদান্ততীর্থ
Pdf Link: ( Click here to Download )

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ