রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

দয়ানন্দ মুখচপেটিকা - শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ কি বোপদেব রচিত?


আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তার ‘সত্যার্থ-প্রকাশ’ নামক সত্যনাশকারী গ্রন্থে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ সম্পর্কে লিখেছে— “এই ভাগবত বোপদেব রচিত ৷ তাঁহার ভ্রাতা জয়দেব ‘গীতগোবিন্দ’ রচনা করিয়াছিলেন ৷ দেখ! তিনি স্বরচিত ‘হিমাদ্রি’ নামক গ্রন্থে এই মর্ম্মে শ্লোক লিপিবদ্ধ করেছেন— ‘আমি শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ রচনা করিয়াছি’ ৷ সেই লিপির তিন পত্র আমার নিকট ছিল ৷ তন্মেধ্যে এক পত্র হারাইয়া গিয়াছে ৷ সেই পত্রের লিখিত শ্লোকগুলির অভিপ্রায় লইয়া আমি নিম্নলিখিত শ্লোকদুটি রচনা করিয়াছি ৷ যিনি দেখিতে ইচ্ছা করেন, তিনি হিমাদ্রি গ্রন্থ দেখিয়া লইবেন ৷”
হিমাদ্রে সচিবস্যার্থে *******
***        *         *       *      *        **** ৷৷ ১
***        *         *       *     *       *****
********** শ্রীকৃষ্ণস্য যশোহম্বিতম্ ৷৷ ২
(সত্যার্থ-প্রকাশ, একাদশ সমুল্লাস)

এইরুপে দুটি নিজের লেখা শ্লোক দিয়ে দয়ানন্দ প্রমাণ করতে চেয়েছে ভাগবত বোপদেপ রচিত!! বলে কিনা, বোপদেব যে শ্লোকে লিখেছে যে, ভাগবত সে রচনা করেছে সেই শ্লোকের লিপিপত্রটি তার কাছ থেকে নষ্ট হয়েগেছে ৷ সেই পত্রটিই কেন নষ্ট হলো, বাকি দুই পত্র নষ্ট হলো না কেন? দয়ানন্দ কতটা মিথ্যাবাদী, শঠ, জোচ্চর ও বেয়াদব তা ধারণার অতীত ৷ মূলত দয়ানন্দের কাছে এমন কোন শ্লোকই ছিলনা যা দ্বারা সে প্রমাণ করতে পারে যে ভাগবত বোপদেবকৃত, তাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লিপিপত্রটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে এই অজুহাত দেখিয়ে ও নিজের সন্তোষজনক দুটি বানোয়াট শ্লোক রচনা করে বলে কিনা ভাগবত বোপদেব রচিত?!!  আবার এও বলে যে “যিনি দেখিতে ইচ্ছা করেন, তিনি হিমাদ্রি গ্রন্থ দেখিয়া লইবেন” ; বস্তুত বোপদেব ‘হেমাদ্রি’ নামক কোন গ্রন্থ লিখেছে এমন কোন প্রমাণ নাই ৷ তবে তদানীন্তন রাজ্যের মন্ত্রী হেমাদ্রির অনুরোধে বোপদেব ‘মুক্তাফল’ ও ‘হরিলীলা’ নামক দুটি গ্রন্থ লেখেন ৷ এই গ্রন্থদ্বয় ভাগবতের টীকা বা ভাষ্য হিসেবে পরিগণিত হয় [নিচের স্ক্রীণশর্ট দেখুন] কিন্তু মূর্খ দয়ানন্দ ঐ টীকা-ভাষ্যমূলক গ্রন্থকেই মূল ভাগবত মনে করে ভ্রমে পতিত হয়েছিল অথবা বৈষ্ণবধর্মের প্রতি বিদ্বেষবশত ধূর্ত দয়ানন্দ জেনেশুনে ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা রটিয়েছে ৷
(বৃহন্মুগদ্ধবোধ ব্যাকরণম্ এর ‘বিজ্ঞপ্তি’)
(বিশ্বকোষ, চতুর্দশ খন্ড, পৃঃ ৪১৬)
আরো লক্ষ্য করুন, দয়ানন্দ এও বলেছে যে  বোপদেবের ভ্রাতা নাকি ‘গীতগোবিন্দ’ রচিয়তা জয়দেব ৷ একথাও সত্য নয়, কারণ (উপর্যুক্ত স্ক্রীণশর্ট আদ্যোপান্ত ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে) বোপদেবের পিতার নাম কেশব ৷ অন্যদিকে জয়দেবের পিতার নাম ভোজদেব ৷ প্রমাণ দেখুন, জয়দেব তার ‘গীতগোবিন্দ’ গ্রন্থের শেষে নিজ পরিচয় দিয়েছেন এভাবে --
শ্রীভোজদেবপ্রভবস্য বামাদেবীসুতশ্রীজয়দেবকস্য ৷
পরাশরাদিপ্রিয়বন্ধুকণ্ঠে শ্রীগীতগোবিন্দকবিত্বমস্তু ৷৷
অর্থ— শ্রীভোজদেব ও বামাদেবীর পুত্র কবি শ্রীজয়দেব ‘শ্রীগীতগোবিন্দ’ রচনা করিয়া পরাশরাদি প্রিয়বন্ধুকন্ঠে উপহারস্বরুপ অর্পণ করিলেন ৷

এইরুপে দয়ানন্দ সর্বথা মিথ্যাবাদীরুপে প্রমাণিত হলো ৷

বলা বাহুল্য যে, শুধু দয়ানন্দ নয়, আরো অনেক বৈষ্ণবধর্ম বিদ্বেষীই এইরুপ অপপ্রচার রটিয়েছিল ৷ তাদের অপপ্রচারের প্রতিবাদে রামাশ্রম কৃত ‘দুর্জনমুখচপেটিকা’ নামক একটি গ্রন্থ লিখিত হয় ৷ এই গ্রন্থে ভাগবতের প্রাচীনত্ব প্রতিপাদন করা হয় ৷ বিপক্ষীরা এই গ্রন্থের প্রতিবাদে অপর একটি গ্রন্থ লিখলে উহা খন্ডন করে ‘দুর্জনমুখপদ্মপাদুকা’ রচিত হয়েছিল ৷ সেই গ্রন্থে বিপক্ষবাদীদের প্রতি অত্যন্ত শ্লেষোক্তি করে ভাগবত যে ব্যাসদেব প্রণীত তাহাই প্রমাণ করা হয় ৷ এক্ষণে আমরা দয়ানন্দ মুখচপেটিকা করিলাম ৷


“ভাগবত বোপদেব-প্রণীত একথা বলা আর বন্ধার পুত্র বলা সমান ৷ আমরা গোঁড়ামীর পক্ষপাতী নহি, কতগুলি লেখক কেবল বৈষ্ণবধর্মের প্রতি বিদ্বেষভাব প্রকাশ করিবার জন্য অসার ও অযৌক্তিক তর্ক উত্থাপন করিয়া ভাগবত পুরাণ বোপদেবপ্রণীত বলিতে সাহসী হইয়াছেন ৷”— ডাক্তার শ্রীরামদাস সেন
পাঠকদের সুবিধার্থে ডাক্তার শ্রীরামদাস সেনের ‘বোপদেব ও শ্রীমদ্ভাগবত’ নামক একটি প্রবন্ধ পিডিএফ ফাইল আকারে দেওয়া হলো --

Pdf Download Link : Click here to Download



সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ