আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসন্ মাতরং পুরঃ।
পিতরং চ প্রযন্তস্বঃ ।। (শুক্লযজুর্বেদ ৩/৬)
ঋষ্যাদি— ওঁআয়ংগৌরিতি সর্পরাজ্ঞীকদ্রূর্ঋষিঃ ৷ গায়ত্রী ছন্দঃ ৷ অগ্নিদেবতা ৷ গার্হপত্যাহবনীয়দক্ষিণাগ্নিস্থাপনে বিনিয়োগ ৷
(এই মন্ত্রের ঋষি- সর্পরাজ্ঞী ৷ ছন্দ- গায়ত্রী ৷ দেবতা- অগ্নি ৷ গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি স্থাপনে এই মন্ত্রের বিনিয়োগ)
.
মন্ত্রার্থ— (অয়ম্) এই দৃশ্যমান অগ্নি (গৌঃ) যজ্ঞনিষ্পত্তির নিমিত্ত যজমানের গৃহে গমনশীল, (পৃশ্নিঃ) লোহিত, শ্বেত, পীত প্রভৃতি বর্ণের শিখাযুক্ত হয়ে (আ) সর্ব প্রকারে অর্থাৎ আহবনীয়, গার্হপত্য ও দক্ষিণাগ্নি স্থানে (অক্রমীৎ) পাদবিক্ষেপ করে ; (পুরঃ) পূর্ব দিকে (মাতরম্) মাতৃরূপা পৃথিবীকে (অসদৎ) প্রাপ্ত করে, (স্বঃ) সূর্যরূপে (প্রয়ন্) সঞ্চরণ করে (পিতরঞ্চ) পিতারূপ দ্যুলোককে (অসদৎ) প্রাপ্ত করে ৷
.
প্রমাণ— ‘স্বঃ আদিত্যো ভবতি’ (নিরুঃ ২৷১৪)
‘দ্যৌর্নঃ পিতা ... মাতা পৃথিবী’ (অথর্ববেদ ৯৷১০৷১২)
.
দয়ানন্দ কৃত মনগড়া ব্যাখ্যা— (অয়ম্) এই প্রত্যক্ষ (গৌঃ) গোলরূপী পৃথিবী (পিতরম্) পালনকারী (স্বঃ) সূর্যলোককে (পুরঃ) আগে আগে (মাতরম্) নিজের যোনিরূপ জলের সাথে বর্তমান হয়ে (প্রয়ন্) প্রকৃষ্টভাবে চলতে থেকে (পৃশ্নিঃ) অন্তরিক্ষে (অক্রমীৎ) চারিদিকে ঘুরতে থাকে ৷
.
দয়ানন্দের ব্যাখার সমালোচনা—
i) মন্ত্রটির দেবতা অগ্নি, তাই মন্ত্রের ‘অয়ম্’ পদে অগ্নিই নির্দেশিত হওয়া উচিত ৷ কিন্তু দয়ানন্দ ‘অয়ম্’ পদটি পৃথিবী নির্দেশার্থ ব্যবহার করেছে, আর মন্ত্রটির দেবতা অগ্নি হওয়া সত্ত্বেও দয়ানন্দের কৃত মূল ব্যাখ্যাতে অগ্নির কোন প্রসঙ্গই নাই ৷
ii) এই মন্ত্রের বিনিয়োগ গার্হপত্য, আহবনীয় ও দক্ষিণাগ্নি স্থাপনে, অথচ দয়ানন্দের ব্যাখ্যাতে বিনিয়োগাদির বিন্দুমাত্র উল্লেখ নাই ৷ যজুর্বেদ যজ্ঞ সম্পাদনের নিমিত্ত, তাই দয়ানন্দের ভাষ্যে যজ্ঞের কোন বিধি-বিধান ও বিনিয়োগের উল্লেখ না থাকায়, উহা ভাষ্যের নামে কেবল ফাঁজলামি মাত্র ৷ সুতরাং উহা তা সম্পূর্ণভাবে পরিত্যাজ্য ৷
iii) দয়ানন্দ ‘গৌঃ’ অর্থ গোলরূপী পৃথিবী লিখে, পৃথিবীকে গতিশীল সিদ্ধ করেছে ৷ কিন্তু নিঘুণ্টে গৌঃ শব্দ পৃথিবীর নাম হিসেবে পঠিত হলেও নিরুক্তকার যাস্ক অন্তরিক্ষে গতিশীল বোঝাতে গৌঃ শব্দটি পৃথিবী অর্থে ব্যবহার না করে বরং সূর্য অর্থেই ব্যবহার করেছেন ৷ প্রমাণ - “গৌঃ আদিত্যো ভবতি ৷ গময়তি রসান্, গচ্ছতি অন্তরিক্ষে” (নিরুক্ত ২.১৪) ৷ আবার মন্ত্রে যে ‘পৃশ্নিঃ’ শব্দটি আছে তাও সূর্যেরই বোধক ৷ প্রমাণ- “পৃশ্নিঃ আদিত্যো ভবতি ৷ প্রাশ্নুতে এনং বর্ণঃ ইতি নৈরুক্তা” (নিরুক্ত ২.১৪)৷ বিচিত্র বর্ণ অগ্নিই সূর্যরূপে অন্তরীক্ষে গমন করে ৷ সুতরাং দয়ানন্দ যে পৃথিবীর গতিশীলপক্ষে মন্ত্রের ভাষ্য তা সম্পূর্ণ তার মনগড়া, পাশ্চাত্য দেশের বিজ্ঞানের তথ্য সে বেদমধ্যে ঢুকিয়েছে মাত্র, এরকম সে ঋগ্বেদে (১৷১১৯৷১০) টেলিগ্রাফের কথা ঢুকিয়েছে ৷ আবার সে বলে যে, সূর্যে নাকি মানুষ বাস করে ।
বেদের যা মূল অর্থ তা-ই বলা উচিত, নাকি নিজের ইচ্ছামতো যেটা ইচ্ছা সেটা বেদের নাম দিয়ে বেদের মুখ দিয়ে বলানো উচিত? স্বয়ং বিচার করুন ৷
[দয়ানন্দ এরূপ বেদের মনগড়া ব্যাখ্যা করে বেদের মর্যাদা হানি করেছে, তাই দয়ানন্দের অপব্যাখ্যার খণ্ডন জরুরী, এজন্যই বাংলাতে খুব শীঘ্র করপাত্রী মহারাজ কৃত দয়ানন্দের ভাষ্য খণ্ডনসহ যজুর্বেদ প্রকাশিত হতে যাচ্ছে]
......................................................................................................................................
আমার এই পোস্টের বিরুদ্ধে দয়ানন্দীরা যে পোস্ট লিখেছে তা খণ্ডনসহ দেওয়া হলো-
যজুর্বেদ ৩/৬ এর সংস্কৃত ভাষ্যে মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী সমস্তকিছুর Reference দিয়েছেন কোন শব্দের অর্থ কোথা থেকে নেওয়া হয়েছে। কিন্তু করপাত্রীর মত ভন্ডদের সেগুলো সমস্তকিছু যথাযথভাবে তুলে ধরে তথাকথিত মহাখন্ডনের সৎসাহসটুকুই নেই। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী যজুর্বেদ৩/৬ এর বৈদিক সংস্কৃত থেকে লৌকিক সংস্কৃততে যেই ভাষ্য করেছেন তার বঙ্গানুবাদ করলে হয়,★आयं गौः पृश्नि॑रक्रमी॒दस॑दन् मा॒तरं॑ पु॒रः। पि॒तरं॑ च प्र॒यन्त्स्वः॑॥আয়ং গৌঃ পৃশ্নিরক্রমীদসদন মাতরং পুরঃ। পিতরং চ প্রয়তস্বঃ।। -[যজুর্বেদ ৩।৬]পদার্থ- (অয়ং) এই প্রত্যক্ষ (গৌ) পৃথিবী [নির্ঘণ্ট১.১,নিরুক্ত২.৫] (মাতরং) নিজ মাতৃরূপ জল সহিত বর্তমান হয়ে (পৃশ্মি) অন্তরীক্ষে [অষ্টাধ্যায়ী ৭.১.৩৯,নির্ঘণ্ট ১.৪] (অসদত) স্বকক্ষে (প্রয়ন) উত্তম প্রকারে চলছে এবং (পিতরং) পালনকারী (স্বঃ) সূর্যলোকের [নিরুক্ত ২/১৪] (পুরঃ) আগে (আক্রমীত) চারপাশে ঘুরছে।এখন আপনারা সকলেই জানেন ভাগবতপুরাণ স্পষ্টতই সূর্যের পৃথিবীর চারদিকে প্রদক্ষিণ করার কথা উল্লেখ রয়েছে। এখন কিছু মানসিক বিকৃতিগ্রস্ত কুলাঙ্গার পুরাণের এই কুসংস্কারের সাথে বেদকে মেলানোর হাস্যকর প্রচেষ্টা করছে। এইসব জোকারগুলো হচ্ছে করপাত্রী নামে এক ভন্ড ও তার অনুসারীগণ। এখন দেখি এই জোকারগুলো বেদকে ভাগবতপুরাণের সাথে মেলানোর কি কি অপচেষ্টা করেছে।১) প্রথমে "গৌ" শব্দ নিয়ে এই ব্যাক্তি কি বলল নীজেও বুঝেছে কিনা আমার সন্দেহ রয়েছে। মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী "গৌ" শব্দের অর্থ পৃথিবী নিয়েছেন। এখন গৌ অর্থ যে পৃথিবী সেই বিষয়ে তিনি নিরুক্ত ও নির্ঘণ্ট উভয় থেকেই তার সংস্কৃত ভাষ্যে প্রমাণ দিয়েছেন। যেমন, ★ गौरिति पृथिव्या नामधेयम्। यद् दूरं गता भवति। यच्चास्यां भूतानि गच्छन्ति -[निरु॰२.५] অর্থ - পৃথিবীর নাম গৌ। কেননা, এটি দূর - দূর পর্যন্ত গমন করে। অথছ, করপাত্রী লিখল নিরুক্তে নাকি গৌ অর্থ পৃথিবী বলাই হয়নি। কতটা শিশুসুলভ মানসিকতার অধিকারী হলে এভাবে নীজেকে হাসির পাত্র বানাতে পারে কেউ! এখন করপাত্রী "গৌ" শব্দের অর্থ বের করল, " যজ্ঞনিষ্পত্তির নিমিত্ত যজমানের গৃহে গমনশীল " গৌ শব্দের বেদাঙ্গসিদ্ধ পৃথিবী অর্থকে খুবই দুর্বল মিথ্যাচারের মাধ্যমে অস্বীকার করে তিনি এর এতবড় মনগড়া অর্থ আবিষ্কার করল ভালো কথা। ত এই অর্থইবা নিরুক্তে কোথায় আছে একটু দেখান? না, এইবিষয়ে করপাত্রীজি সম্পূর্ণ চুপ। সে যাই হোক, গৌ শব্দের আরো বিভিন্ন অর্থ হয় এটা সঠিক। এখন মহর্ষি তার মধ্যে পৃথিবী অর্থটি নিলেন। তাতে ভুলটা কি হল?
Counter Reply: গাঁজাখোর, রমাবাঈের প্রেমিক পুরুষ ও সেক্সটনিকধারী দয়ানন্দের
শিষ্য লিখেছে যে, “অথছ, করপাত্রী লিখল নিরুক্তে নাকি গৌ অর্থ পৃথিবী বলাই
হয়নি।” এটি ডাহা মিথ্যা কথা, জন্মগত মিথ্যাবাদীদের কাছ থেকে মিথ্যাই আশা
করা যায়, সত্য নয় ৷ আমার পোস্টে স্পষ্টই লেখা ছিল যে, "কিন্তু নিঘুণ্টে গৌঃ
শব্দ পৃথিবীর নাম হিসেবে পঠিত হলেও নিরুক্তকার যাস্ক অন্তরীক্ষে গতিশীল
বোঝাতে গৌঃ শব্দটি পৃথিবী অর্থে ব্যবহার না করে বরং সূর্য অর্থেই ব্যবহার
করেছেন ৷ প্রমাণ - “গৌঃ আদিত্যো ভবতি ৷ গময়তি রসান্, গচ্ছতি অন্তরিক্ষে”
(নিরুক্ত ২.১৪) ৷”
সূর্যের নামও গৌঃ, আবার পৃথিবীর নামও গৌঃ ৷ কিন্তু মহর্ষি যাস্ক সূর্যেকেই
অন্তরীক্ষে গমনশীল বলেছেন, পৃথিবীকে নয় ৷ পৃথিবীর নাম গৌঃ কেন, সে সম্বন্ধে
বলেছেন-
गौरिति पृथिव्या नामधेयम्। यद् दूरं गता भवति। यच्चास्यां भूतानि गच्छन्ति
-[निरु॰२.५] অর্থঃ পৃথিবী দূর গতা বলে বা এর মধ্যে প্রাণীসমূহ গমন করে বলে,
পৃথিবীর নাম গৌঃ ৷
পৃথিবীর দূর গতা অর্থ পৃথিবী দূর-দূরান্ত ব্যাপী ৷ পৃথিবীর মধ্যে
প্রাণীসমূহ দূর থেকে সুদূরে গমানাগমন করে, তাই পৃথিবীর নাম গৌঃ ৷ মহর্ষি
যাস্ক কিন্তু পৃথিবীকে অন্তরীক্ষে গমনকারী বলেন নাই, তাই দয়ানন্দ যে
পৃথিবীকে অন্তরীক্ষে গমনশীল বলেছেন তা প্রামণহীন ৷
আর গৌঃ শব্দটি √গাম্ ধাতু থেকে এসেছে যার অর্থ গমন ৷ যেহেতু মন্ত্রটির
দেবতা অগ্নি, তাই গৌঃ অর্থে যজ্ঞনিষ্পত্তির জন্য যজমানের গৃহে গমনশীল---এই
অর্থই সমুচিত ৷
২) করপাত্রীজি বললেন, পৃশ্নি নাকি এখানে সূর্যসূচক।
অথছ, মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী পাণিনি অষ্টাধ্যায়ী ও নির্ঘণ্ট উভয় থেকেই তার
ভাষ্যে প্রমাণ দেখিয়েছেন যে পৃশ্নি অর্থ " অন্তরিক্ষ " হয়।
যেমন,
★अन्तरिक्षे। अत्र सुपां सुलुग्॰ [अष्टा॰७.१.३९]
★इति सप्तम्येकवचने प्रथमैकवचनम्। पृश्निरिति साधारणनामसु पठितम्।
[निघं॰१.४]
মহর্ষির দেওয়া এই স্পষ্টত বেদাঙ্গপ্রমাণগুলোকে জনগণের সামনে তুলে ধরার মত
সৎসাহসটুকুই এই শিশুর হলনা।
Counter Reply: হাসাল মোর বালক! ওহে বালক, পৃশ্নিঃ অর্থ যখন অন্তরীক্ষ তখন,
গৌঃ অর্থ সূর্য ধরলে না কেন? কারণ সূর্যই অন্তরীক্ষে গমন করে ৷ প্রমাণ -
“গৌঃ আদিত্যো ভবতি ৷ গময়তি রসান্, গচ্ছতি অন্তরিক্ষে” (নিরুক্ত ২.১৪) ৷” আর
নিঘুণ্টের শব্দগুলোরই ব্যাখ্যা রয়েছে নিরুক্তে ৷ তাই ওহে বালক,
ব্যাখ্যাখানা একটু খুলে দেখ, গাঁজা খেয়ে দয়ানন্দের মতো মনগড়া ব্যাখ্যা
করলে, গাঁজার নৌকা পাহাড় দিয়েই তো যাবে ৷
নিরুক্তে বলা হয়েছে- “পৃশ্নিঃ আদিত্যো ভবতি ৷ প্রাশ্নুতে এনং বর্ণঃ ইতি
নৈরুক্তা” (নিরুক্ত ২.১৪)৷ এখানে স্পষ্টই আদিত্য অর্থাৎ সূর্যকেই পৃশ্নিঃ
বলা হয়েছে, যেহেতু সূর্য সকল বর্ণ শোষণ করেন ৷ যেহেতু মন্ত্রটির দেবতা
অগ্নি, তাই প্রাচীন ভাষ্যকারগণ পৃশ্নি অর্থ বিচিত্র বর্ণের শিখাযুক্ত অগ্নি
করেছেন ৷ আবার অগ্নিই সূর্যরূপে অন্তরীক্ষে গমন করে ৷ সুতরাং প্রাচীন
ভাষ্যকারগণ কৃত অর্থই সমীচিন, অর্বাচীন দয়ানন্দ কৃত অর্থ বানোয়াট ৷
৩) করপাত্রী আরেকটি দুর্বল মিথ্যাচার করল যে মন্ত্রের দেবতা অগ্নি। কিন্তু মহর্ষি দয়ানন্দ সরস্বতী নাকি অগ্নি নিয়ে তার ভাষ্যে কিছুই দেন নি। অথছ মহর্ষি তার ভাষ্যে ভাবানুবাদেই দিয়েছেন যে, " অগ্নি ও জলের নিমিত্ত হতে উৎপন্ন এই পৃথিবী "
Counter Reply: এখানেও মিথ্যাবাদী দয়ানন্দের শিষ্যটি আমার পোস্টের তথ্য
ভূলভাবে উপস্থাপন করেছে ৷ আমার পোস্টে বলা হয়েছিল যে, দয়ানন্দের কৃত
“মন্ত্রের মূল ব্যাখ্যাতে” অগ্নির কোন প্রসঙ্গই নাই ৷ তা যখন মন্ত্রের মূল
ব্যাখ্যাতেই অগ্নির কোন প্রসঙ্গ নাই, তখন দয়ানন্দ তার ভাবানুবাদে অগ্নির
কথা ঢুকাল কি গাঁজা খেয়ে??? হয়ত বেচারা দয়ানন্দ ভয় পেয়েছিল, ভেবেছিল,
মন্ত্রের দেবতা তো অগ্নি, কিন্তু আমি মন্ত্রটির যে ব্যাখ্যা বানালাম তাতে
তো অগ্নির কোন স্থানই হলো না!! তাই চুপিসারে আমার নিজস্ব ভাবানুবাদে অগ্নির
কথা ঢুকিয়ে দিই, নয়তো আমাকে লাথি-ঝাটা খেতে হতে পারে ৷ শুধু শুধু তো আর
লোকজন আমার বক্তৃতাতে আমাকে জুতা-ইট-পাটকেল ছুড়ে মারে না! !
৪) করপাত্রী "গৌ" শব্দের বেদাঙ্গসিদ্ধ অর্থ "পৃথিবী" অস্বীকার করে "মাতরং"
শব্দের অর্থ নিয়ে নিল
" মাতৃরূপ পৃথিবী "।
এখন তার এই অর্থ নেওয়ার পেছনে যুক্তি দেখাল যে অথর্ববেদের একটি মন্ত্রে বলা
আছে,
দ্যুলোক হল পিতা , পৃথিবী হল মাতা।
এই ব্যাক্তির যুক্তিগুলো যে ছোট্টবাচ্চাদের মত তার প্রমাণ পূর্বেই অনেক
পাওয়া গিয়েছে। এখন আরো বেশি পাওয়া গেল।
এভাবে অন্য কোন মন্ত্রে কাকে পিতা ও মাতা বলা হয়েছে সে অনুসারে যজুর্বেদ৩/৬
এর ভাষ্য হবে!
এরকম বহু মন্ত্রেই বহুজনকে পিতা ও মাতা বলা হয়েছে।
বিভিন্ন মন্ত্রে ঈশ্বরকে পিতা ও প্রকৃতিকে মাতা বলা হচ্ছে।
(অথর্ববেদ ৭/৬/১) তে প্রকৃতিকে মাতা ও পিতা বলে সম্মোধন করা হচ্ছে।
(ঋগ্বেদ ৮/৯৮/১১) তে পরমাত্মার উদ্দেশ্যে বলা হচ্ছে যে,
" আপনিই আমাদের পিতা, আপনি মাতা "
এখন করপাত্রী (অথর্ববেদ৭/৬/১) (ঋগ্বেদ৮/৯৮/১১) কিংবা অন্যান্য মন্ত্রগুলো
অনুসারে
যজুর্বেদ ৩/৬ এ মাতা - পিতা বলতে " প্রকৃতি ", "পরমাত্মা " বা অন্যান্য
ব্যবহৃত শব্দগুলো নিলনা কেন?
এই করপাত্রী যে কতবড় মিথ্যাচারী তার পরিচয় এখান থেকেই পাওয়া যায়।
Counter Reply: বালার্যদের এই পয়েন্টটি সবচেয়ে বেশি শিশুসুলভ ও হাস্যকর ৷
কারণ তারা যে প্রশ্ন তুলেছে, সেই একই প্রশ্ন দয়ানন্দের ভাষ্যের প্রতি এবার
আমি তুলব ৷
তারা বলেছে, অথর্ববেদের এই মন্ত্রে দ্যুলোককে পিতা, ও পৃথিবীকে মাতা বলা
হলেও তা নাকি শুক্লযজুর্বেদ ৩/৬ এর জন্য প্রযোজ্য নয় ৷ তাহলে, একইভাবে আমিও
বলতে পারি যে, নিঘুণ্ট-নিরুক্তে গৌঃ অর্থ পৃথিবী হলেও তা শুক্লযজুর্বেদ
৩/৬ এর জন্য প্রযোজ্য নয় ৷
তারা আরও বলেছে যে, অন্যান্য মন্ত্রে পরমাত্মাকেই পিতা-মাতা বলা হয়েছে,
আবার কোথাও পরমাত্মাকে পিতা, আবার প্রকৃতিকে মাতা বলা হয়েছে---এসব অর্থ কেন
করপাত্রীজী শুক্লযজুর্বেদ ৩/৬ তে গ্রহণ করল না? একইভাবে, আমিও প্রশ্ন
তুলতে পারি যে, নিরুক্তে তো সূর্যকেও গৌঃ বলা হয়েছে, আবার গৌঃ অর্থ গরুও
হয়, তো এসব অর্থ কেন দয়ানন্দ শুক্লযজুর্বেদ ৩/৬ তে গ্রহণ করল না?
শোন রে মহামূর্খগণ! কোথায় কোন শব্দের কোন অর্থ গ্রহণ করতে হয়, তার জন্য
প্রকরণ জ্ঞান থাকা আবশ্যক, যা দয়ানন্দের কিঞ্চিৎ পরিমাণেও ছিল না ৷ যেমন-
সৈন্ধবঃ নামে লবণ ও অশ্ব রয়েছে ৷ রান্নার সময়ে সৈন্ধব অর্থ লবণ, গমনের সময়
অশ্ব বুঝতে হবে ৷ যদি কেউ রান্না প্রসঙ্গে সৈন্ধব অর্থ অশ্ব বোঝে, আর গমনের
সময় লবণ বোঝে তবে সে মহামূর্থ ব্যতীত আর কি? দয়ানন্দ এইরূপ মহামূর্খ ছিল,
তাই ছাগলটা প্রতিমা অর্থ তুলনা, সাদৃশ্য ইত্যাদি থাকতেও প্রকরণজ্ঞানহীনতার
কারণে ‘ন তস্য প্রতিমা অস্তি’ মন্ত্রে প্রতিমা অর্থ মূর্তি ধরে
প্রতিমাপূজার বিরোধীতা করেছিল ৷
এক অগ্নিই মাতৃরূপা পৃথিবীতে পার্থিব অগ্নিরূপে, অন্তরীক্ষে বিদ্যুতরূপে,
পিতারূপী দ্যুলোকে সূর্যরূপে অবস্থান করে ৷ একারণে করপাত্রীজীর ভাষ্যই
সঠিক, দয়ানন্দের ভাষ্য প্রকরণহীণ ভাবে প্রমাণাদির প্রয়োগ করায় তা ভ্রান্ত ৷
৪) এছাড়াও, এখানে দাবি করা হল যে মহর্ষি নাকি এভাবেই পাশ্চাত্য দেশের বিজ্ঞানের সাথে মেলাতে ঋগ্বেদ১/১১৯/১০ এ টেলিগ্রাফের কথা ঢুকিয়ে দিয়েছে। সত্য বিজ্ঞানের সাথে পাশ্চাত্য- দেশীয়র কি সম্পর্ক? তা উপলব্ধি করার মত সুস্থ মানসিকতস এদের নেই। তবুও এই গোয়ারদেরকে একটাই কথা বলব - টেলিগ্রাফির প্রযুক্তি পাশ্চাত্যের বিজ্ঞানীরা অাবিষ্কার করেছিল নাকি ভারতীয় বাঙালি হিন্দু বিজ্ঞানী ড. জগদীশ চন্দ্র বসু করেছিল তা ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হয়ে পড়ে অাসুন।
Counter Reply: দয়ানন্দ উল্লেখ করেছে তারওয়ালা টেলিগ্রাফের, আর জগদীশচন্দ্র
বসু আবিষ্কার করেছি তারবিহীন রেডিও বা ‘বেতার’ ৷ এ দুটোকে ঘুলিয়ে যে এক
করে ফেলেছে, সেই মহামূর্খ নাদানটিরই কি ক্লাস ওয়ানে ভর্তি হওয়া উচিত নয়?
৫)যজুর্বেদ ৩/৬ এ "গৌ" শব্দের বেদাঙ্গসিদ্ধ পৃথিবী অর্থ নিয়ে মিথ্যাচার করে সে নীজেকে যথেষ্ট হাসির পাত্র বানাল। কিন্তু বেদের অনেক মন্ত্রেই যে সরাসরি "পৃথিবী " শব্দ ব্যবহার করে পৃথিবীর গতিশীলতার বিষয়ে স্পষ্টত উল্লেখ অাছে। এই করপাত্রী সেগুলোরও সমীক্ষা করে নীজেকে আরেকটু হাসির পাত্র বানাল না কেন?★বীমে দ্যাবাপৃথিবী ইতো বি পন্থানো দিংশদিশম। -[অথর্ববেদ ৩।৩১।৪]অর্থ- (ইমে) এই (দ্যাবাপৃথিবী) সূর্য ও পৃথিবীলোক (বি ইত) বিশেষরূপে পৃথক পৃথক (পন্থান) মার্গে [আলাদা আলাদা কক্ষপথে] (দিংশ দিশম) ভিন্ন দুই দিশায় [ ভিন্ন গতিতে] ( বি=যন্তি) গতিশীল রয়েছে।
Counter Reply: যেমন দয়ানন্দের শুক্লযজুর্বেদ ৩/৬ মন্ত্রটির ব্যাখ্যা ভুল,
তেমনি এই মন্ত্রটির প্রদত্ত অর্থও ভুল ৷ সম্পূর্ণ মন্ত্র ও সঠিক অর্থ -
বীহ'মে দ্যাবাপৃথিবী ইতো বি পন্থনো দিশংদিশম্।
ব্যহং সর্বেণ পাপ্মনা বি যক্ষ্মেণ সমায়ুষা ॥ [অথর্ববেদ ৩।৩১।৪]
যেমন (ইমে) এই (দ্যাবাপৃথিবী) আকাশ ও পৃথিবী (বি ইতঃ) স্বভাবতঃ পৃথক পৃথক হয়ে থাকে, আর (দিশংদিশম্) এক দি হতে অপর দিকে গমনের (পন্থানঃ) পথসমূহ (বি) যেমন পৃথক-পৃথক হয়ে থাকে, তেমনই এই বালককেও (অহং) আমি (সর্বেণ পাপ্মনা বি) স্বভাবতঃ সকল পাপ হতে
বিযুক্ত হয়ে অবস্থানশালী করে দিচ্ছি। (যক্ষ্মেণ বি) যক্ষ্মা রোগ হতে বিযুক্ত করে একে (আয়ুষা সম্)
দীর্ঘ আয়ুষ্মত্তা প্রদান করছি।
উল্লেখ্য যে, আর্যসমাজী হরিশরণ, তুলসীরাম শর্মার অনুবাদও একই প্রকার ।
পরিশেষে, এই করপাত্রী একজন অদ্বৈতবাদী - মায়াবাদী তথাকথিত ধর্মগুরু। অন্যদিকে তার শিশুসুলভ ভাষ্য থেকে কপি মেরে পোস্ট করেছে সে একজন খাঁটি বৈষ্ণব। কিন্তু বৈষ্ণবমত হল আর্যসমাজের মতই কঠোরভাবে অদ্বৈতবাদের বিরোধী। স্বয়ং চৈতন্য মহাপ্রভু শাস্ত্রের অদ্বৈতবাদী-মায়াবাদী ভাষ্য পড়লে সর্বনাশ হয় বলেছেন(চৈ.চ, মধ্যলীলা ৬/১৬৯)
Counter
Reply: যদিও আমি নিজেকে বৈষ্ণব বলে দাবি করি না, কারণ সে পর্যায়ে আমি এখনো
উঠিনি, তবুও দয়ানন্দীটি আমাকে খাঁটি বৈষ্ণব বলায় বেশ প্রীত হলাম ৷
শোন রে দয়ানন্দী, বৈষ্ণবগণ ‘বাদ’কে অমান্য করতে পারেন, কিন্তু ব্যক্তিটিকে
তারা অশ্রদ্ধা করেনা ৷ গীতা-ভাগবতের টীকাকার শ্রীধর স্বামি ছিলেন
অদ্বৈতবাদী, তিনি অদ্বৈবাদী হলেও ভক্তিবাদী ছিলেন এবং গৌড়ীয় বৈষ্ণবগণ
তাঁকে যার পর নাই মান্য করেন ৷
তেমনিই করপাত্রী মহারাজও একজন ভক্তিবাদী ভাগবত মহাপুরুষ ৷ ভাগবতের ওপর লেখা
তাঁর গ্রন্থও রয়েছে, যথা- ভাগবত সুধা, ভ্রমর গীতা ইত্যাদি ৷ আর তিনি
যজুর্বেদের যা মূল অর্থ তাই-ই ব্যক্ত করেছেন, তিনি তাঁর নিজ মত দয়ানন্দের
মতো বেদের মধ্যে ঢুকাননি যে তা পড়লে সর্বনাশ হবে ৷
এইরূপে প্রতিপাদিত হলো যে, দয়ানন্দীরা দয়ানন্দের ভুল ব্যাখ্যাকে ঢাকতে যতই
কুপ্রচেষ্টা, গুজামিল তথ্য দিক না কেন তা সকলই মিথ্যা ৷
।। ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু ।।