বুধবার, ১ এপ্রিল, ২০২০

মূর্তিপূজা : সম্ভূতি অসম্ভূতি আলোচনা : দয়ানন্দ কৃত ভাষ্য খণ্ডন


দয়ানন্দী: মাটির মূর্তির পূজা করলে কি হয়,  এই বিষয়ে বেদ কি বলে দেখেন?? সম্ভূতি-অসম্ভূতি,
অন্ধতমঃ প্র বিশান্তি যে অসম্ভূতিমুপাসতে।
ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভুতাংরতাঃ।।
যজুর্বেদ ৪০/৯
পদার্থঃ- যে মানুষ পরমেশ্বর কে ছেড়ে ( অসম্ভূতিম্)  অনাদি,  অনুৎপন্ন সত্ত্ব,  রজ,  তমগুণরূপ অব্যাক্ত প্রকৃতির ( উপাসতে)  উপাসনা করে ( তে)  তারা ( অন্ধম্) অজ্ঞানরূপ ( তমঃ) অন্ধাকারে ( প্রবিশন্তি)প্রবেশ করে ( যে)  যারা ( সম্ভূ্যাম্)  সৃষ্ট ব্যাক্ত প্রকৃতির উপাসনা ( রতাঃ)  রত ( তে)  তারা ( উ)  নিঃসন্দেহে ( ততঃ)তা থেকেও ( ভূয় ইব)  অধিকতর ( তমঃ) অবাদ্যারূপ অন্ধকারে ( প্রবিশন্তি)  প্রবেশ করেন।
ভাবার্থঃ - যারা সত্ত্ব, রজ,  তমগুণযুক্ত অব্যাক্ত প্রকৃতির তথা জড় জগতের অনাদি নিত্য কারন প্রকৃতির উপাসনা করে,  তারা অজ্ঞানের ঘোর অন্ধকারে প্রবেশ করে।  আর যারা কারন প্রকৃতির থেকে সৃষ্ট ব্যাক্ত পদার্থের তথা পৃথিব্যাদি স্হুল কার্য প্রকৃতির উপাসনা করে তারা আরও ঘোরতর অন্ধকারময় স্হানে গতি লাভ করে। তাই সর্বদা সচ্চিদানন্দ পরমত্মার ই উপাসনা করা উচিত।

হিন্দু: এটা কার ভাষ্য?
.
দয়ানন্দী: এটা মহর্ষি দয়ানন্দ কৃত ভাষ্য ৷
.
হিন্দু: দয়ানন্দকে মহর্ষি খেতাবটা কে কবে দিয়েছে একটু জানাবেন প্লিজ? মহর্ষি অর্থ ঋষিদের মধ্যে মহান বা শ্রেষ্ঠ যিনি ৷ যারা বেদমন্ত্রের দ্রষ্টা তাদেরকে বলা হয় ঋষি ৷ কিন্তু দয়ানন্দ বেদমন্ত্রের ব্যাখ্যা করে সেই বেদদ্রষ্টা ঋষিদের চেয়েও শ্রেষ্ঠ হয়ে গেল??? এ কেমন বিচার বাপু তোমাদের!
তারপর দয়ানন্দের ঐ ভাষ্যই যে বেদের আসল অর্থ তাও তো নয় হে বাপু ৷ যেমন দেখুন, খোদ আর্যসমাজের এক ভাষ্যকার ঐ মন্ত্রের কিরুপ ভাষ্য করেছে—


অন্ধতমঃ প্র বিশান্তি যে অসম্ভূতিমুপাসতে।
ততো ভূয় ইব তে তমো য উ সম্ভুতাংরতাঃ।।
                                            ( শুক্ল যজুর্বেদ ৪০/৯)
‘সম্’ শব্দের অর্থ ‘একসাথে’ আর ‘ভূতি’ অর্থ ‘হওয়া’, অর্থাৎ একত্রিত হওয়া, ব্যক্তিত্বের কথা পৃথক চিন্তা না করে সমাজের জন্য চিন্তা করাই ‘সম্ভূতি’ ৷ এর বিপরীতে কেবল ব্যক্তিস্বার্থের প্রাধান্য দেওয়াই ‘অসম্ভূতি ’—এখানে ব্যক্তি কেবল নিজের কল্যাণ চিন্তা করে, সমাজের কল্যাণ সে উপেক্ষা করে ৷ এই মন্ত্র এই কথা বলে যে:—
(যে) যে ব্যক্তি (অসম্ভূতিম্) ব্যক্তিবাদের (উপাসতে) উপাসনা করে, সে (অন্ধতমঃ) গভীর অন্ধকারে (প্রবিশন্তি) প্রবেশ করে ৷ কিন্তু একক সমাজবাদ কি কল্যাণ করতে পারে? উত্তর এই যে, কল্যাণ তো দূরের কথা (যে) যে ব্যক্তি (সম্ভূত্যাম্) সমাজবাদে (রতাঃ) ফেঁসে আছে (তে) সে (ততঃ) ঐ ব্যক্তিবাদীর চেয়েও (ভূয় ইব) যেন অধিকতর (তমো) অন্ধকারে প্রবেশ করে ৷ কেবল সমাজবাদীদের গতি ব্যক্তিবাদীদের চেয়ে অধিক হীন হয় ৷ কারণ তারা ব্যক্তিকে একদম উপেক্ষা করায় ব্যক্তি উন্নতি সমাপ্ত হয়ে যায় ৷ অথচ ব্যক্তি নিয়েই সমাজ গঠিত হয় ৷ তাই ব্যক্তি নির্বল হওয়ার পরিণামে সমাজ নির্বল হয়ে যায় ৷ (হিন্দী থেকে ভাষান্ততরিত)
[#ভাষ্যকার: পণ্ডিত হরিশরণ সিদ্ধান্তলঙ্কার]

এই ভাষ্যে দেখা যাচ্ছে যে, উক্ত মন্ত্রে মূর্তিপূজা বিষয়ে লেশমাত্রও কোন ইঙ্গিত নাই, কিন্তু দয়ানন্দ এমনি মূর্খ যে, মন্ত্রটির কুভাষ্য রচনা করে বেদকে মূর্তিপূজার বিপক্ষে দাড় করবার অপচেষ্ঠা করেছে ৷
দয়ানন্দ কৃত ভাষ্য যদি সঠিক ধরা যায়, তবে রামায়ণ-মহাভারত-পুরাণাদি সকল ধর্মগ্রন্থ বেদবিরোধী হয়ে যায়, কারণ ঐ সকল শাস্ত্রে মুূর্তিপূজার পক্ষে ভূরি ভূরি প্রমাণ রয়েছে ৷ এটা কি সম্ভব যে, ঐ সকল শাস্ত্রকাররা এতদিন বেদ বুঝে নাই, যত বুঝা কেবল কলিকালের অর্বাচীন সন্ন্যাসী দয়ানন্দই বুঝেছে? এত যুগ যুগ ধরে যে হিন্দুজাতি মূর্তিপূজা করে আসছে তারা সকলে অন্ধঃতমে প্রবেশ করবে??


[বলা বাহুল্য যে, আমরা হরিশরণের ভাষ্যের সমর্থক নই, উহা কেবল দয়ানন্দীদের বোধ জাগাইবার নিমিত্ত প্রদর্শিত হইল ৷ সম্ভূতি-অসম্ভূতির বিস্তারিত ব্যাখ্যা জানতে ঈশোপনিষদের ১২ থেকে ১৪ নং মন্ত্র দেখুন ৷ ঈশোপনিষদের pdf লিঙ্ক:→
http://vaishnavaism.blogspot.com/2017/12/bengali-upanishads.html?m=1 ]

// ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু //

সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ