শুক্রবার, ২৫ মে, ২০১৮

দয়ানন্দের দূর্গতি কেন? অবশ্যই পড়ুন ও জানুন

(পেটুক স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী)


প্রায় একমাস যাবৎ বিষের যন্ত্রণায় ছটফট করতে করতে অবশেষে একদিন আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী দেহ ত্যাগ করলেন ৷ তো দেহ ত্যাগ মাত্রই দয়ানন্দের আাত্মা এক অদম্য শক্তির টান অনুভব করল, সেই টানে তীব্র গতিতে সে কোন এক স্থানে এসে পৌছালো ৷ দয়ানন্দ প্রথমে বুঝতে পারল না যে, কোথায় সে অবস্থান করছে এবং দেখতে পেল যে তার সম্মুখে ভীমাকার এক পুরুষ দণ্ডায়মান ৷
দয়ানন্দ জিজ্ঞাসা করল— “আপনি কে? আমি এখন কোথায় আছি?”
উত্তর এলো— “আমি যম ৷ তুমি নরকে আছ ৷”
দয়ানন্দ বলল— “ও! পৌরাণিক যম নাকি? আমি পুরাণের যম-টম মানি না ৷”
এইকথা শুনে যমরাজ দয়ানন্দের মুখে সাজোরে কষে চার-পাঁচটি থাপ্পড় মেরে দিল ৷ থাপ্পড় খেয়ে দয়ানন্দ কিছুটা ভীত হলো এবং মাথা নিচু করে রইল ৷
যমরাজ বললেন— “হতচ্ছাড়া! পৃথিবীতে গায়ের জোড়ে এ মানি না, তা মানি বলে পার পেয়েছিস বলে কি পরলোকেও পার পাবি ভেবেছিস? তুই অনেক পাপীষ্ঠ, তোকে অনেক সাঁজা পেতে হবে ৷ প্রথমত আমাকে না মানার জন্য একরাত উত্তম-মধ্যম হবে ৷”
যমরাজ তার চরদের ডেকে দয়ানন্দের রিমান্ডের ব্যবস্থা করলেন এক রাতের জন্য ৷ উত্তম-মধ্যম খেয়ে দয়ানন্দ হাওয়া বের হয়ে যাওয়া বেলুনের মতো চুপসে গেল ৷ পরদিন দয়ানন্দের বিচার বসল ৷
দয়ানন্দ— “আমি কি কোন পাপ করেছি? আমাকে নরকে আসতে হলো কেন?”
যম— “আলবাৎ পাপ করেছিস ৷ পুরাণ মান্যকারীদের, ভগবদ্বিগ্রহ আরাধনাকারীদের অবমাননা করেছিস তুই, আর এর ফলে তোর বাপই প্রথমে অপমানিত হয়েছে কারণ তিনি পৌরাণিক শিবের উপাসক ছিল ৷ বল, তোর কর্ম দ্বারা তোর বাপ অপমানিত হলে তোর পাপ হয়না কি? আরো দেখ, তোকে অনুকরণ করে তোর গর্দ্দভ অনুসারীরাও আজকাল আপামর হিন্দুজনগণকে ‘পৌরাণিক মূর্তিপূজকের দল’ ইত্যাদি বলে গালমন্দ করছে ৷ এতে তারা তোর বাপকেই প্রথমে গালমন্দ করছে, কারণ তোর বাপই তো পৌরাণিক মূর্তিপূজক ছিল ৷ এ পাপের ভার কে নেবে???”
দয়ানন্দ— (নিশ্চুপ)
যম— “তুই একবার তোর বাপকে মিথ্যা কথা বলেছিলি সেটা মনে পরে? তুই স্বেচ্ছায় বাড়ি থেকে পালিয়ে তোর বাপের কাছে বলেছিলি যে তুই কোন সাধু পন্ডিতের প্ররোচনায় এই কাজ করেছিস! মিথ্যা বললে কি পাপ হয় না রে? শোন, তুই যে আজীবন কতশত মিথ্যাচার করেছিস তা ইতিহাসে না লেখা থাকলেও আমার অজানা নেই কিছুই!”
দয়ানন্দ— “কিন্তু আমি তো বেদপ্রচার করেছি, সেটা কি পূণ্যের কাজ নয়? সেই পুণ্যের দ্বারা কি আমার পাপ ক্ষমা করা যায় না?”
যম— “(মুচকি হেঁসে) না, যাবে না ৷ কারণ তুইই তো তোর সত্যার্থ প্রকাশ নামক সত্যনাশকারী গ্রন্থে লিখেছিস যে ঈশ্বর ভক্তের পাপ ক্ষমা করেন না ৷ তাহলে তোর পাপ আমি কি করে ক্ষমা করব?? আর তুই তো বেদের যথাযথ অর্থ প্রচার করিসনি, বেদের নামে নিজের মনগড়া কল্পিত অর্থ বাহির করে প্রচার করেছিস ৷ কত মিথ্যা মত তুই প্রচার করেছিস তার ইয়ত্তা নেই ৷ রে দয়ানন্দ, পৃথিবীর কিছু মানুষকে বোকা বানাতে সক্ষম হয়েছিস বলে কি আমাকেও বোকা ভাবিস???”
দয়ানন্দ দেখল যে যমরাজের সাথে চালাকি চলবে না, কোন উপায় না দেখে দয়ানন্দ হঠাৎ চিৎকার করে কাঁদো কাঁদো স্বরে বলতে থাকল— “হা ঈশ্বর! আপনি কোথায়? আমাকে এই যমের হাত থেকে রক্ষা করুন ৷”
যম— “কিরে দয়ানন্দ, বিপদে পরে তোর বুদ্ধি লোপ পেল নাকি? জানিস না ঈশ্বর সর্বত্র বিরাজমান ৷ তিনি কোথায় নেই?”
দয়ানন্দ— “তাহলে আমি তাকে দেখতে পাচ্ছি না কেন? এই মহুর্তে তার সাক্ষাৎ পাওয়াটা আমার জন্যে জরুরী ৷ তিনি আমাকে দেখা দিচ্ছেন না কেন? তিনি আমাকে রক্ষা করছেন না কেন? আমি আপনার বিচার মানি না, আমি তার কাছে বিচার চাইব ৷”
যম— “কিরে দয়ানন্দ, তুই না বলেছিস ঈশ্বর নিরাকার? তাহলে ঈশ্বরের সাথে তুই সাক্ষাৎ করবি কিভাবে? তার কাছে বিচার রাখবি কিভাবে? তাই তুই শুধু ঈশ্বরের উদ্দেশ্যে চেঁচিয়েই যা, কিন্তু তার দেখা পাবি না কোনদিনও ৷ অতএব আমি যা বিচার করব সেটাই হবে তোর ভাগ্যে ৷”
দয়ানন্দ— “(হতাশ হয়ে) কি আছে আমার ভাগ্যে?”
যম— “তুই বেদ মানার অজুহাত দেখিয়ে অন্যান্য ধর্মগ্রন্থ অবমানা করেছিস ৷ নিজের মতের সাথে মিললে যেকোন শাস্ত্রের উক্তি গ্রহণ করেছিস, আর তোর নিজস্ব মতের সাথে না মিললে তা অস্বীকার করেছিস ৷ এইরুপে অন্যান্য শাস্ত্রকে অগ্রাহ্য করার জন্য তুই ২১বার কুকুর-শৃগাল-ছাগল প্রভৃতি পশুজন্ম প্রাপ্ত হবি ৷ যা পশু হ!”

যমরাজ এই বাক্য বলার পর পরই দয়ানন্দ যেন কোন এক অদম্য শক্তির টান অনুভব করল, সেই শক্তি তাকে যেন কোথাও ছুটিয়ে নিয়ে চলছে তীব্র গতিতে.... কিয়ৎক্ষণ পর দয়ানন্দ নিজেকে আবিষ্কার করল এক কুকুরের গর্ভে ৷ কিছুদিন পর দয়ানন্দ কুকুররুপে জাত হলো এবং কিছুদিন পর কুকুররুপী দয়ানন্দ কহিল- “ঘেউ! ঘেউ! ঘেউউউউ......”


[বিঃদ্রঃ এই লেখাটি বঙ্গীয় আর্য প্রতিনিধি সভা হতে প্রকাশিত ‘ভক্তের দূর্গতি কেন?’ নামক বইটার প্রতি পাটকেলস্বরুপ (Tit for Tat) ৷ স্বল্প পৃষ্ঠার উক্ত বইটাতে না আছে যৌক্তিক কোন কথা, না আছে শাস্ত্রীয় প্রমাণ ৷ বইটার লেখক কেবল ভগবদ্ভক্তদের প্রতি বিদ্বেষ-বশত তার নিজস্ব হীন মানসিকতা থেকে একটি কাল্পনিক গল্প তৈরী করেছে ৷ সে যাহোক, আমরা কেবল বলব, হে আর্যসমাজ! হে কদর্যমানসিক আর্যসমাজীগণ! তোমরা যত বড় কুকুরই হও না কেন, আমরা তত বড় মুগুরই ধরতে প্রস্তুত আছি ৷৷]


সোমবার, ১৪ মে, ২০১৮

নারদ ভক্তিসূত্র ও শাণ্ডিল্যসূত্র




♦ নারদ ভক্তিসূত্র
মূল সূত্র, সরল অনুবাদ এবং টীকা-সমন্বিত
অনুবাদ ও সম্পাদনা → নীলোৎপল সিনহা
Pdf Download Link.: ( Click here to Download )


♦ শাণ্ডিল্যসূত্রম্
মেথিল শ্রীভবদেবভট্ট বিরচিত ‘অভিনব’ ভাষ্য
                   এবং
শ্রীহৃষীকেশ শাস্ত্রী কৃত বঙ্গানুবাদ
Pdf Download Link : ( Click here to Download )


৷৷ ওঁ শ্রীকৃষ্ণার্পণমস্তু ৷৷

রবিবার, ১৩ মে, ২০১৮

দয়ানন্দ মুখচপেটিকা - শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ কি বোপদেব রচিত?


আর্যসমাজ প্রতিষ্ঠাতা স্বামী দয়ানন্দ সরস্বতী তার ‘সত্যার্থ-প্রকাশ’ নামক সত্যনাশকারী গ্রন্থে শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ সম্পর্কে লিখেছে— “এই ভাগবত বোপদেব রচিত ৷ তাঁহার ভ্রাতা জয়দেব ‘গীতগোবিন্দ’ রচনা করিয়াছিলেন ৷ দেখ! তিনি স্বরচিত ‘হিমাদ্রি’ নামক গ্রন্থে এই মর্ম্মে শ্লোক লিপিবদ্ধ করেছেন— ‘আমি শ্রীমদ্ভাগবত পুরাণ রচনা করিয়াছি’ ৷ সেই লিপির তিন পত্র আমার নিকট ছিল ৷ তন্মেধ্যে এক পত্র হারাইয়া গিয়াছে ৷ সেই পত্রের লিখিত শ্লোকগুলির অভিপ্রায় লইয়া আমি নিম্নলিখিত শ্লোকদুটি রচনা করিয়াছি ৷ যিনি দেখিতে ইচ্ছা করেন, তিনি হিমাদ্রি গ্রন্থ দেখিয়া লইবেন ৷”
হিমাদ্রে সচিবস্যার্থে *******
***        *         *       *      *        **** ৷৷ ১
***        *         *       *     *       *****
********** শ্রীকৃষ্ণস্য যশোহম্বিতম্ ৷৷ ২
(সত্যার্থ-প্রকাশ, একাদশ সমুল্লাস)

এইরুপে দুটি নিজের লেখা শ্লোক দিয়ে দয়ানন্দ প্রমাণ করতে চেয়েছে ভাগবত বোপদেপ রচিত!! বলে কিনা, বোপদেব যে শ্লোকে লিখেছে যে, ভাগবত সে রচনা করেছে সেই শ্লোকের লিপিপত্রটি তার কাছ থেকে নষ্ট হয়েগেছে ৷ সেই পত্রটিই কেন নষ্ট হলো, বাকি দুই পত্র নষ্ট হলো না কেন? দয়ানন্দ কতটা মিথ্যাবাদী, শঠ, জোচ্চর ও বেয়াদব তা ধারণার অতীত ৷ মূলত দয়ানন্দের কাছে এমন কোন শ্লোকই ছিলনা যা দ্বারা সে প্রমাণ করতে পারে যে ভাগবত বোপদেবকৃত, তাই মিথ্যার আশ্রয় নিয়ে লিপিপত্রটি নষ্ট হয়ে গিয়েছে এই অজুহাত দেখিয়ে ও নিজের সন্তোষজনক দুটি বানোয়াট শ্লোক রচনা করে বলে কিনা ভাগবত বোপদেব রচিত?!!  আবার এও বলে যে “যিনি দেখিতে ইচ্ছা করেন, তিনি হিমাদ্রি গ্রন্থ দেখিয়া লইবেন” ; বস্তুত বোপদেব ‘হেমাদ্রি’ নামক কোন গ্রন্থ লিখেছে এমন কোন প্রমাণ নাই ৷ তবে তদানীন্তন রাজ্যের মন্ত্রী হেমাদ্রির অনুরোধে বোপদেব ‘মুক্তাফল’ ও ‘হরিলীলা’ নামক দুটি গ্রন্থ লেখেন ৷ এই গ্রন্থদ্বয় ভাগবতের টীকা বা ভাষ্য হিসেবে পরিগণিত হয় [নিচের স্ক্রীণশর্ট দেখুন] কিন্তু মূর্খ দয়ানন্দ ঐ টীকা-ভাষ্যমূলক গ্রন্থকেই মূল ভাগবত মনে করে ভ্রমে পতিত হয়েছিল অথবা বৈষ্ণবধর্মের প্রতি বিদ্বেষবশত ধূর্ত দয়ানন্দ জেনেশুনে ইচ্ছাপূর্বক মিথ্যা রটিয়েছে ৷
(বৃহন্মুগদ্ধবোধ ব্যাকরণম্ এর ‘বিজ্ঞপ্তি’)
(বিশ্বকোষ, চতুর্দশ খন্ড, পৃঃ ৪১৬)
আরো লক্ষ্য করুন, দয়ানন্দ এও বলেছে যে  বোপদেবের ভ্রাতা নাকি ‘গীতগোবিন্দ’ রচিয়তা জয়দেব ৷ একথাও সত্য নয়, কারণ (উপর্যুক্ত স্ক্রীণশর্ট আদ্যোপান্ত ভালোভাবে লক্ষ্য করলে দেখতে পাবেন যে) বোপদেবের পিতার নাম কেশব ৷ অন্যদিকে জয়দেবের পিতার নাম ভোজদেব ৷ প্রমাণ দেখুন, জয়দেব তার ‘গীতগোবিন্দ’ গ্রন্থের শেষে নিজ পরিচয় দিয়েছেন এভাবে --
শ্রীভোজদেবপ্রভবস্য বামাদেবীসুতশ্রীজয়দেবকস্য ৷
পরাশরাদিপ্রিয়বন্ধুকণ্ঠে শ্রীগীতগোবিন্দকবিত্বমস্তু ৷৷
অর্থ— শ্রীভোজদেব ও বামাদেবীর পুত্র কবি শ্রীজয়দেব ‘শ্রীগীতগোবিন্দ’ রচনা করিয়া পরাশরাদি প্রিয়বন্ধুকন্ঠে উপহারস্বরুপ অর্পণ করিলেন ৷

এইরুপে দয়ানন্দ সর্বথা মিথ্যাবাদীরুপে প্রমাণিত হলো ৷

বলা বাহুল্য যে, শুধু দয়ানন্দ নয়, আরো অনেক বৈষ্ণবধর্ম বিদ্বেষীই এইরুপ অপপ্রচার রটিয়েছিল ৷ তাদের অপপ্রচারের প্রতিবাদে রামাশ্রম কৃত ‘দুর্জনমুখচপেটিকা’ নামক একটি গ্রন্থ লিখিত হয় ৷ এই গ্রন্থে ভাগবতের প্রাচীনত্ব প্রতিপাদন করা হয় ৷ বিপক্ষীরা এই গ্রন্থের প্রতিবাদে অপর একটি গ্রন্থ লিখলে উহা খন্ডন করে ‘দুর্জনমুখপদ্মপাদুকা’ রচিত হয়েছিল ৷ সেই গ্রন্থে বিপক্ষবাদীদের প্রতি অত্যন্ত শ্লেষোক্তি করে ভাগবত যে ব্যাসদেব প্রণীত তাহাই প্রমাণ করা হয় ৷ এক্ষণে আমরা দয়ানন্দ মুখচপেটিকা করিলাম ৷


“ভাগবত বোপদেব-প্রণীত একথা বলা আর বন্ধার পুত্র বলা সমান ৷ আমরা গোঁড়ামীর পক্ষপাতী নহি, কতগুলি লেখক কেবল বৈষ্ণবধর্মের প্রতি বিদ্বেষভাব প্রকাশ করিবার জন্য অসার ও অযৌক্তিক তর্ক উত্থাপন করিয়া ভাগবত পুরাণ বোপদেবপ্রণীত বলিতে সাহসী হইয়াছেন ৷”— ডাক্তার শ্রীরামদাস সেন
পাঠকদের সুবিধার্থে ডাক্তার শ্রীরামদাস সেনের ‘বোপদেব ও শ্রীমদ্ভাগবত’ নামক একটি প্রবন্ধ পিডিএফ ফাইল আকারে দেওয়া হলো --

Pdf Download Link : Click here to Download



সাম্প্রতিক পোস্ট

পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা

 পুরুষ—কৃষ্ণ ৷৷ প্রকৃতি—রাধা ======================= যোগেনাত্মা সৃষ্টিবিধৌ দ্বিধারূপো বভূব সঃ ৷ পুমাংশ্চ দক্ষিণার্ধাঙ্গো বামাঙ্গঃ প্রকৃতিঃস্...

জনপ্রিয় পোস্টসমূহ